সুপ্রিম কোর্ট থেকে ছুটি চন্দ্রচূড়ের। আর তার সঙ্গেই ওকালতি জীবন থেকেই বরাবরের মতো ছুটি হয়ে গেল তাঁর। সংবিধানমতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের পর ওকালতি নিষিদ্ধ। তাহলে এবার কোন কাজ করতে পারবেন চন্দ্রচূড়?
আর ন্যায়বিচার দিতে পারব না, শেষ কর্মদিবসে এ কথা বলেই সুপ্রিম কোর্ট ছাড়েন ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। ২০২২ সালের ৯ নভেম্বর দেশের ৫০তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। সিজেআই হিসেবে এতদিন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা শোনার পর এবার বিদায় চন্দ্রচূড়ের। অবশ্য ২০১৬ সালেই সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। তার আগে ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ছিলেন এলাহাবাদ হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। কিন্তু সিজেআই-এর পদ থেকে অবসরের পর আর কোনোভাবেই ওকালতির জীবনে ফিরতে পারবেন না চন্দ্রচূড়। কিন্তু তা বলে কি পেশার জগতের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িয়ে থাকতে পারবেন না তিনি? অবসর মানে কি কেবলই ছুটির দিন কাটাবেন চন্দ্রচূড়?
আসলে যে সংবিধান মেনে প্রধান বিচারপতিরা কাজ করে চলেন, দেশের সেই সংবিধানই তাঁদের অবসরের পর ওকালতিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। সংবিধানের ১২৪(৭) অনুচ্ছেদ অনুসারে, অবসরের পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আর ওকালতি করতে পারবেন না। একই নিয়ম কার্যকর সুপ্রিম কোর্টের অন্য বিচারপতিদের ক্ষেত্রেও। আসলে এহেন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন চূড়ান্ত গোপন তথ্য জানতে পারেন তাঁরা। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা ওকালতি করলে, সেই তথ্য অন্য মামলায় ব্যবহারের সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু দেশের আইন এবং সংবিধান, এবং তার রক্ষক বিচারপতিদেরও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকার দায় রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতিদের অবসরের পর ওকালতি করায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কিন্তু তার মানে যে অন্য কোনও কাজই পেশাদারভাবে করতে পারবেন না তাঁরা, তা কিন্তু নয়। ওকালতি করতে না পারলেও আইন ব্যবস্থায় অন্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন শীর্ষ আদালতের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারপতিরা। যেমন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মামলায় ‘আর্বিট্রেটর’, অর্থাৎ আদালত নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দেখা যায়। জাতীয় পরিবেশ আদালতেও তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ ছাড়াও অভিজ্ঞতাবলে দেশের প্রশাসনের বড় বড় ভূমিকায় অংশ নিতে পারেন তাঁরা। যেমন মানবাধিকার কমিশন বা অন্য কোনও কমিশনের প্রধান হিসেবে কিংবা কোনও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কমিটিতে তাঁরা কাজ করতে পারেন। এমনকি রাজ্যপাল হিসাবেও সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাঁদের। অবশ্য সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিতেও পারেন বিচারপতিরা। তবে চন্দ্রচূড় নিজেই একসময় বলেছিলেন, তেমন কোনও পদক্ষেপ করতে চাইলেও অবসর আর রাজনীতির মাঝে একটা বড় সময় অপেক্ষা করা উচিত প্রাক্তন বিচারপতিদের। অবসরের পর আগামী জীবনে তিনি কী করবেন, সেটাই এখন দেখার।