জল যন্ত্রণায় জর্জরিত বেঙ্গালুরু। দৈনন্দিনের পানীয় জল পেতেও হিমশিম খাচ্ছেন সেখানকার মানুষ। এই সংকটের ছবি আমাদেরও কি সতর্ক করবে না?
রাস্তাঘাটে বেরোলেই চোখে পড়ে, প্রচুর মুখ খোলা কল। যেখান থেকে হুহু করে বয়ে যাচ্ছে জল। কেবল গঙ্গার কলই নয়, যেখানে সময় মেনে জল আসে, সেখানেও ছবিটা কিন্তু বিশেষ আলাদা নয়। অনেকেই রাস্তার কল থেকে প্রয়োজনের জলটুকু ভরে নিয়ে কলের মুখ বন্ধ করা আর প্রয়োজন বলেই মনে করেন না। যতক্ষণ না জল যাওয়ার সময় হচ্ছে, ততক্ষণ ধরেই চলতে থকে জলের অপচয়। এ নিয়ে কথা বললেও যে সবাই বিশেষ পাত্তা দেন, তাও নয়। অথচ জলের আরেক নাম যে জীবন, এ কথা তো সেই ছোটবেলার পাঠ্য বইয়েই শেখা। কিন্তু বাস্তবে আর সে কথার প্রয়োগ ঘটল কই!
আরও শুনুন:
CAA নিয়ে আপত্তি থাকা উচিত নয় দেশের মুসলিমদেরও, কেন উঠছে এমন মত?
তবে এ কথা নিয়ে মাথা না ঘামালে যে বেশিদিন নিশ্চিন্তে থাকা যাবে না, সাম্প্রতিক সময় কিন্তু তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই শিরোনামে বেঙ্গালুরুর জল সংকট। হ্যাঁ, রাজস্থান কি মরু অঞ্চলের কোনও কোনও স্থানে যে জলের কষ্ট নিত্যসঙ্গী, সে কথা আমাদের জানাই ছিল। কিন্তু স্বভাবতই, সেই তথ্য আমাদের সচেতন করেনি। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে, আর মরু অঞ্চলেও নয়, একেবারে মেট্রো শহরেই থাবা বসিয়েছে এই সংকট। অবস্থা এমনই যে, কেউ কেউ বলছেন, এক মাসে মোটে বার পাঁচেক স্নান করতে পেরেছেন তাঁরা। কেউ কেউ বলছেন, রান্না করবেন কী, জলই তো নেই! পানীয় জল তো বটেই, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারযোগ্য জলের সংকটে ভুগছে কর্নাটক। তার মধ্যে বেঙ্গালুরুর পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। বেঙ্গালুরু শহরের জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ। সেখানে দৈনিক জলের চাহিদা ২৬০ কোটি থেকে ২৮০ কোটি লিটার। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি দিন বেঙ্গালুরুতে অন্তত ১৫০ কোটি লিটার জলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে জল কিনতে গিয়েও দামের কারণে নাভিশ্বাস উঠছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এক বালতি জল কিনতে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জল অপচয় না করার বার্তা দিয়েছে প্রশাসন। জলের জোগান দেওয়ার জন্য প্রশাসনের তরফে দু-একটি ট্যাঙ্কার আসছে শহরে, সেখান থেকেও বরাদ্দ এক পাত্র জল। প্রশাসনের সাফ নির্দেশ, গাড়ি ধোয়া, বাগান পরিচর্যা, নির্মাণকাজ, বিনোদন সংক্রান্ত কোনও কাজে জল ব্যবহার করা যাবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে কর্নাটক ওয়াটার সাপ্লাই বোর্ডের তরফে।
আরও শুনুন:
রাষ্ট্রকে প্রশ্ন নয়! গণতন্ত্র চলছে?
স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, শহরের বেশির ভাগ এলাকার নলকূপ শুকিয়ে গিয়েছে। জলস্তর গিয়েছে নেমে। অন্তত ৩০০০ জলের ট্যাঙ্কার শুকিয়ে গিয়েছে বলে দাবি। গত কয়েক মাস ধরে কম বৃষ্টি হওয়ার ফলে সমস্যা বেড়েছে আরও। নলকূপ শুকিয়ে যাওয়ায় পর্যাপ্ত জলের জোগান দেওয়া যাচ্ছে না। আর এই অবস্থাই বুঝিয়ে দিচ্ছে, কেবল নগরায়ণ বা নগরের সৌন্দর্যায়ন করেই মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলিকে পূরণ করা যায় না। যে চাহিদা প্রকৃতি থেকেই মেটে, তার জন্য প্রকৃতিকে যত্ন করাটাও জরুরি। জরুরি প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি যত্নবান হওয়াও। বেঙ্গালুরু নাহয় এ কথা ঠেকে শিখল, কিন্তু আমরা দেখেও শিখব কি?