অযোধ্যায় রামলালার না ফেরা অব্দি জুতো ছাতা কিছুই ব্যবহার করবেন না, ভরতের মতোই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। শেষ পর্যন্ত ৫০০ বছর পেরিয়ে পূর্ণ হচ্ছে সেই শপথ। রামজন্মভূমিতে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে শোনা যাক তাঁদের কথাও।
নিজেদের খোদ শ্রীরামচন্দ্রের বংশধর বলেই দাবি করেন উত্তরপ্রদেশের এই গ্রামের বাসিন্দারা। সে কারণেই, ভরতের মতোই এক প্রতিজ্ঞা নিয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। ঠিক করেছিলেন, অযোধ্যায় রামলালার না ফেরা অব্দি জুতো পরবেন না তাঁরা। ব্যবহার করবেন না ছাতা কিংবা পাগড়ি। অবশেষে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ আর সেখানে রামলালার প্রতিষ্ঠা ঘিরেই সেই ব্রত ভাঙতে চলেছে তাঁদের।
আরও শুনুন: ন্যায়ের জন্য আজীবন লড়াই, সিনেমার স্ট্রাগলের থেকে কম নয় বিলকিসের বাস্তব জীবন
বাল্মীকি রামায়ণ জানিয়েছিল, রাম যখন বনে গিয়েছিলেন, সেই সময় অযোধ্যায় ছিলেন না কৈকেয়ীর পুত্র ভরত। জন্মভূমিতে ফিরে এসে রামের বনবাসের কথা জানা মাত্রই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন বনে, রামকে অযোধ্যায় ফিরিয়ে আনার জন্য। সে প্রস্তাবে সম্মত হননি রাম। তাঁকে ফেরাতে না পেরে তাঁর খড়ম নিয়ে অযোধ্যায় ফিরেছিলেন ভরত। পাশাপাশি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, রাম যতদিন অযোধ্যার রাজপ্রাসাদে ফিরে না আসছেন, ততদিন যাবতীয় রাজকীয় সুখভোগ থেকে বঞ্চিত থাকবেন তিনিও। এমনকি পাদুকা, শিরস্ত্রাণ বা রাজছত্র ব্যবহারও করবেন না। রামের বনবাসের ১৪ বছর ধরে ভরতও যে এহেন কৃচ্ছ্রসাধন পালন করে চলেছিলেন, সে কথা মনে রেখেছেন রামের ভক্তরা। আর সে পথেই হেঁটেছেন যোগীরাজ্যের সরাইরাসি গ্রামের বাসিন্দারা। নিজেদের ‘সূর্যবংশী’ বলেই পরিচয় দেন তাঁরা। অর্থাৎ তাঁরাও রামের বংশেরই সন্তান, এমনটাই তাঁদের বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাস আঁকড়েই ৫০০ বছর ধরে চামড়ার জুতো, ছাতা কিংবা পাগড়ি ব্যবহার করেননি এই গ্রামবাসীরা।
আরও শুনুন: রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠায় ‘ব্রাত্য’! অযোধ্যায় ‘অভিমানী’ দুর্গা বাহিনী, সংঘের মহিলা সদস্যরাও
চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ভক্তদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষা পেরিয়ে খুলে যাচ্ছে রাম মন্দিরের দরজা। গর্ভগৃহে প্রতিষ্ঠা পাবেন রামলালা। সেই উপলক্ষেই উৎসবের রেশ লেগেছে এই গ্রামেও। স্থানীয় বাজারে দেখা যাচ্ছে রংবেরঙের পাগড়ি আর নাগরা জুতো কেনার ধুম পড়েছে পুরুষদের মধ্যে। ৫০০ বছরের ব্রতপূরণের আনন্দে সেজে উঠেছে গ্রামও। যদিও তার মধ্যেও খানিক আক্ষেপ রয়েছে কারও কারও। মন্দির উদ্বোধনে কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও আমন্ত্রণ মেলেনি, এ নিয়ে হতাশ গ্রামবাসীদের একাংশ। তবে রামলালা যে অযোধ্যায় ফিরছেন, আর সেইসঙ্গেই পূর্ণ হচ্ছে তাঁদের ৫০০ বছরের ব্রতও, এ কথা ভেবেই আপাতত দুঃখ ভুলছে যোগীরাজ্যের এই গ্রাম।