রাজস্থানের পর এবার উত্তরপ্রদেশ। কিছুদিন আগেই রাজস্থানে উচ্চ বর্ণের শিক্ষকের বেধড়ক মারে প্রাণ গিয়েছিল একটি দলিত শিশুর। এবার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটি শিশুর গায়ে গরম খাবার ছুঁড়ে মারার অভিযোগ উঠল উত্তরপ্রদেশের একটি স্কুলের অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে। ঘটনার নৃশংসতায় শিউড়ে উঠেছে গোটা দেশ। কেন এমন কাণ্ড? শুনে নিন।
দলিত ‘অপরাধে’ এক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর গায়ে গরম খাবার ঢেলে দিল স্কুলের শিক্ষক। এবার উত্তরপ্রদেশ।
দলিত নিগ্রহের ঘটনা এ দেশে কোনও নতুন বিষয় নয়। তবে ইদানীং যেভাবে একের পর এক দলিত শিশুর উপর উচ্চবর্ণের কোপ নেমে আসছে, তাকে ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হবে। দিন কয়েক আগেই স্কুলে উচ্চ বর্ণের জন্য বরাদ্দ জলের পাত্র থেকে জল খেয়ে ফেলেছিল এক খুদে। আর সেই অপরাধেই দলিত ওই ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে ওই পড়ুয়া। হাসপাতালে বেশ কিছুদিন লড়াইয়ের পর মারা যায় সেই খুদে। ঘটনায় প্রতিবাদে সরব হয়েছিল গোটা দেশ। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের দলিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটল উত্তরপ্রদেশে।
আরও শুনুন: তিনশো হিরে খচিত বহুমূল্য প্ল্যাটিনামের নেকলেস! রানিকে উপহার দিয়েছিলেন হায়দরাবাদের নিজাম
বারাবাঙ্কি জেলার টিকাইতনগরের ইছোলি গ্রামের একটি স্কুলের ঘটনা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন একটি শিশুর হাতে গরম খাবার ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেই স্কুলের খোদ অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে। পুড়ে গিয়েছে শিশুটির হাতের কব্জি ছাড়াও বেশ কিছুটা অংশ।
ঘটনাটি ঘটে বেশ কয়েকদিন আগে। সম্প্রতি ওই ছাত্রীর বাবা-মা বারাবাঙ্কি জেলা ম্যাসিস্ট্রেট আদর্শ সিংহের কাছে অভিযোগ জানান। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই অধ্যক্ষার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তিনি খারাপ খারাপ মন্তব্য করেন বলেও অভিযোগ। স্কুল থেকে তাড়িয়েও দেওয়া হয় তাঁদের। অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ধারায় মামলাও দায়ের হয়েছে গুড্ডু পণ্ডিত নামে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
না, তবে এত কিছুর পরেও কমেনি দলিত নিগ্রহের ঘটনা। দু-এক দিন আগেই উত্তরপ্রদেশের ভাদোহিতে বছর সাতেকের এক দলিত পড়ুয়াকে বেধড়ক মারধর করেন শিক্ষক। মাটিতে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর মাথা। দ্বিতীয় শ্রেণীর ওই পড়ুয়ার অপরাধ শুধু এতটুকু, সে স্কুলের মাঠে খেলছিল। শিক্ষক রেগেমেগে তাঁকে ঘুসি পর্যন্ত মারেন।
আরও শুনুন: এ যেন রূপকথা! ৬০০ বছরের পুরনো প্রাসাদ-সহ গোটা দ্বীপের মালিক হলেন ব্যক্তি
তবে শুধু যে পড়ুায়ারাই এমন নিগ্রহের শিকার তা কিন্তু নয়। একই ভাবে নির্যাতনের মুখে পড়ছেন দলিত শিক্ষকরাও। বারাবাঙ্কি জেলারই একটি স্কুলের এক সংস্কৃত শিক্ষককে নানা ভাবে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে সেই স্কুলেরই অন্যান্য শিক্ষক এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। তাঁর ‘অপরাধ’ তিনি দলিত। সামগ্রীক ভাবে গোটা যোগী রাজ্যেই ক্রমশ বাড়ছে দলিত নিগ্রহের ঘটনা। শিশু থেকে বৃদ্ধ, বাদ যাচ্ছেন না কেউই। বারবার একই ধরনের ঘটনার পরেও নির্বিকার প্রশাসন। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও কড়া বার্তা বা সিদ্ধান্তের কথা শোনা যায়নি যোগী সরকারের মুখে। এ দেশের সংবিধানপ্রণেতা ছিলেন নিজে একজন দলিত। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিও ছিলেন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে এ সব কি শুধুই বিচ্ছিন্ন ঘটনা! জাতি নিয়ে এই হানাহানি থেকে কবে মুক্তি পাবে আজকের ভারত? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।