বরাবরই প্রাকৃতিক অঘটনকে ঈশ্বরের রোষ বলেই ধরে এসেছে মানুষ। আজ থেকে নয়, এই প্রথা চলে আসছে সেই মঙ্গলকাব্যের যুগ থেকেই। করোনা তাড়াতে থালাবাটি বাজানো থেকে শুরু করে লেবুর দাম কমাতে বিশেষ পুজো, কতকিছুই তো দেখেছি আমরা। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে স্বয়ং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের কাছে নালিশ ঠুকে বসলেন এক কৃষক। অনাবৃষ্টির গোটা দায়টাই তিনি চাপিয়েছেন ইন্দ্রদেবের উপরে। কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘ভগবানের বন্ধু’ হিসেবে মামলা ঠোকার কথা তো হামেশাই শোনা যায়। রামমন্দির থেকে জ্ঞানবাপী কিংবা শাহি ইদগাহ মসজিদ, সব ক্ষেত্রেই ঈশ্বরের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তাদের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ‘ঈশ্বরের বন্ধু’-রা। সেই অধিকার দিয়েছে খোদ সংবিধান।
আরও শুনুন: ঈশ্বরের হয়ে আইনি লড়াই লড়বেন কে? আদালতের জবাব, ‘ভগবানের বন্ধু’ ভক্তরাই
তবে এবার ভগবানের পক্ষে নয়, বরং ভগবানের বিরুদ্ধেই নালিশ ঠুকে বসলেন এক ব্যক্তি। অনাবৃষ্টি, খরায় চাষবাস লাটে ওঠার জোগাড়। পরের পর লোকসান। তিতিবিরক্ত হয়ে খোদ ইন্দ্রের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের করে বসলেন পেশায় কৃষক ওই ব্যক্তি। উত্তরপ্রদেশের গোন্দা জেলার ঝালা গ্রামে ঘটেছে এমনই ঘটনা।
বেশ কয়েক দিন ধরেই উত্তরপ্রদেশে দেখা নেই বৃষ্টির। ইতিমধ্যেই বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন সেখানকার কৃষকেরা। বৃষ্টি আনতে গোটা গ্রামে নানা ধরনের পুজোআচ্চার আয়োজন করা হচ্ছে রোজই। তবে সেই প্রার্থনা-অনুনয়ের পথে না হেঁটে স্বয়ং ঈশ্বরের বিরুদ্ধেই খড়্গহস্ত হলেন এই ব্যক্তি।
আরও শুনুন: ঈশ্বরের রোষেই অগ্নিমূল্য লেবু! দাম কমাতে হল পুজো-আচ্চা, বলির সামগ্রীও সেই লেবু
হিন্দু পুরাণমতে বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্র। তাই বৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের সমস্ত ক্ষমতা তাঁর হাতে বলেই লৌকিক বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাসে ভর করেই সেই ইন্দ্রদেবকেই কাঠগড়ায় তুললেন সুমিত কুমার যাদব নামে ওই কৃষক। এত এত মানুষের চাষবাসে এত লোকসানের জন্য ইন্দ্রদেবের গাফিলতির দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি।
সম্প্রতি ওই গ্রাম প্রশাসনের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল ‘সমাধান দিবস’-এর। সেদিন গ্রামবাসীদের অভাব অভিযোগ শোনে প্রশাসন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয় তার ভিত্তিতে। সেখানেই একটি অভিযোগপত্রে খোদ দেবরাজ ইন্দ্রের নামে নালিশ ঠুকেছেন সুমিত কুমার। জেলাশাসককে ব্যাপারটি নিয়ে ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন তিনি।
এমন চিঠি পেয়ে তো চোখ কপালে উঠেছে গোন্দা জেলার ওই গ্রাম প্রশাসনের। তবে তহসিলদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি চিঠিটি না-পড়েই পাঠিয়ে দেন জেলাশাসকের কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তিনি। তবে সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন তিনি। ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই আশ্চর্য অভিযোগপত্রটি। খোদ দেবতার প্রতি এমন নালিশের বহর দেখে অবাক নেটিজেনরাও। তবে নিজের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ সুমিত কুমার। আপাতত জেলাশাসক ইন্দ্রদেবের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করেন, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন ওই কৃষক।