হত্যা, ধ্বংস, গণধর্ষণ – ইউক্রেনের মাটি যেন রুশ সেনার আগ্রাসনে বিষে বিষময়। যুদ্ধ কি শেষ হয়েছে? সঠিক উত্তর কেউই দিতে পারেন না। তবে যুদ্ধের বিষময় ফল ফলতে শুরু করেছে। যার ভুক্তভোগী সে-দেশের মহিলারা। ইউক্রেনের তরফে জানানো হচ্ছে, রুশ সেনার হাতে বন্দি ইউক্রেনের মহিলাদের অনেকেই এই মুহূর্তে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন। ফিরেছে সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্মৃতি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময় যেন ফিরে এল এই একবিংশ শতাব্দীতে। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জার্মান সেনার দখলে থাকা বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিলেন বহু মহিলা। স্রেফ যুদ্ধের কারণে অবাঞ্ছিত ভাবে জন্ম নেওয়া সেই শিশুদের পরিচয় হল ‘ওয়ার চাইল্ড’। ৭১’-এর মুক্তিযুদ্ধও এই ভয়াবহতার সাক্ষী থেকেছে। পরবর্তী সময়ে যুদ্ধ যেখানেই বেধেছে, সেখানেই দেখা গিয়েছ একই ছবি। সেনার দখলে থাকা অঞ্চলে চলেছে নির্বিচারে ধর্ষণ আর তার ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন বন্দি মহিলারা। এবার তার সাক্ষী ইউক্রেনের মাটি। যুদ্ধের প্রাথমিক অভিঘাত সরিয়ে যত তদন্ত এগোচ্ছে, জানা যাচ্ছে, রুশ সেনার হাতে বন্দি বহু ইউক্রেনীয় মহিলাই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন।
আরও শুনুন: শক্তিশালী রুশ সেনাকে কীভাবে রুখে দিল ইউক্রেন? নয়া কৌশল শিখবে ভারতীয় সেনা
যে বুচা শহরের গণহত্যা নিয়ে নিন্দায় সরব হয়েছে গোটা বিশ্ব, সেখানেই উঠে এসেছে ভয়াবহ ছবি। ইউক্রেনের তরফে জানানো হয়েছে, বহু মহিলাকেই বুচা বেসমেন্টে আটক করে রেখেছিল রুশ বাহিনী। তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই মুহূর্তে অন্তঃসত্ত্বা। রুশ সেনার আগ্রাসনে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাজধানী কিভের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি। সমর বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর দখল পুরোপুরি নিতে না পেরেই নির্বিচারে পাশের শহরগুলিতে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে রুশ সেনা। অন্য মত জানাচ্ছে, গণহত্যা এবং গণধর্ষণের মতো এই যে ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা সামনে আসছে, তা রেগুলার আর্মি বা পেশাদার রুশ সেনার কাজ নয়। কেননা যে কোনও দেশের সেনাবাহিনিরই কিছু নির্দিষ্ট নীতি বা মিলিটারি কোড অফ কনডাক্ট থাকে। অপরদিকে, পুতিন ইউক্রেনে যে চেচেন সেনা পাঠিয়েছিলেন, তারা নীতি বা নৈতিকতার কোনও ধার ধারে না। অর্থাৎ মানবাধিকার রক্ষা বা কোড অফ কন্ডাক্ট রক্ষার দায় তাদের নেই। মূলত এই চেচেন সেনাদের হাতেই এমন ধ্বংসলীলা সাধিত হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
আরও শুনুন: দেশরক্ষাই ধর্ম, রমজান পালনের মধ্যেও কর্তব্যে অবিচল ইউক্রেনের মুসলমান সৈনিকরা
কিন্তু যার হাতেই ধ্বংসলীলা হোক না কেন, যুদ্ধ যে ভয়াবহ বাস্তবতা ডেকে আনে, এই মুহূর্তে ইউক্রেনের মাটি তা জানান দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে। একের পর এক ধর্ষণের খবর জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সে দেশের আধিকারিকরা। তবু সত্যিটা এই যে, সে দেশের মহিলা নাবালিকা তো বটেই এমনকী বৃদ্ধা ও বালকদেরও রেয়াত করা হয়নি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সামনে ইউক্রেনের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, রুশ সেনার হাতে বারংবার ধর্ষিতা হয়েছেন বন্দি মহিলারা। তাঁদের বলা হয়েছিল, নির্যাতনের বহর এমন হবে, যাতে তাঁরা ভবিষ্যতে আর পুরুষ-সংসর্গ না করতে পারে। ইউক্রেনের সন্তানের জন্ম যেন তাঁরা আর না দিতে পারেন। এখন সেইসব ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বা রাষ্ট্রসংঘের দরবারে রাশিয়াকে হেয় করারই উদ্দেশ্য ইউক্রেনের। আর তাই রুশ সেনাকে ধর্ষণকারী এবং নির্যাতনকারী হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
দুই দেশের চাপান-উতোর হয়তো ভবিষ্যতেও চলবে। আর সেই টানাপোরেনের ভিতরই হয়তো পৃথিবীর আলো দেখবে আরও অবাঞ্ছিত শিশু। যাদের পরিচয় হবে একটাই – ওয়ার চাইল্ড।