সে দেশ সূর্যমুখী ফুলের দেশ। সেখানে দিগন্তজোড়া মাঠ সেজে থাকে হলুদ ফুলে। অথচ ইউক্রেনের মানুষ বুঝে গিয়েছেন, ফুল খেলবার দিন শেষ। ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। সূর্যমুখী খেতে এখন চলছে রুশ সৈন্যদের শরীরচর্চা। তেমনই এক সেনাকে সূর্যমুখী ফুলের বীজ পকেটে ভরে নিতে বললেন ইউক্রেনবাসী মহিলা। কেন এমন বললেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠতেই নড়েচড়ে বসেছে ভারত। বোমার আগুন গায়ে না লাগলেও, যুদ্ধের দরুন বাজারে আগুন লাগার আশঙ্কা কিন্তু ষোলো আনা। কারণ, স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোজ্য তেল হিসেবে বেড়েছে সানফ্লাওয়ার অয়েল বা সূর্যমুখী তেলের চাহিদা। আর সেই তেলের অধিকাংশটাই আমদানি করা হয় ইউক্রেন থেকে। ২০২১ সালের তথ্য জানাচ্ছে, ভারত প্রায় ১.৮৯ মিলিয়ন টন সূর্যমুখী তেল আমদানি করেছে, যার ৭৪ শতাংশই এসেছে ইউক্রেন থেকে। হ্যাঁ, কেবল ভারত নয়, গোটা পৃথিবীর কাছেই সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের সবচেয়ে বড় উৎস ইউক্রেন। সারা দেশ জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে সূর্যমুখী ফুলের খেত। এই ফুল সে দেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদাও পেয়েছে। আর এই যুদ্ধের পরিস্থিতিতে সেই ফুলটিকেই অভিনবভাবে নিজের প্রতিবাদের সঙ্গে জুড়ে নিলেন ইউক্রেনবাসী এক মহিলা। বিদেশি সৈন্যের সামনে তাঁর প্রতিবাদের ধরন দেখে মুগ্ধ নেটদুনিয়া।
আরও শুনুন: ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে কতটা বদলাবে ভারত-রাশিয়া-আমেরিকার সম্পর্কের সমীকরণ?
ঠিক কী বলেছেন ওই মহিলা?
আরও শুনুন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কী হবে ভারতের ভূমিকা? কতখানি প্রভাব পড়বে ভারতীয়দের উপর?
গত কালই শোনা গিয়েছিল, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনা। শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। নেটমাধ্যমে ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দুই রুশ সৈন্যের মুখোমুখি পড়ে গিয়েছেন সে দেশের এক মহিলা। কিন্তু সশস্ত্র বিদেশি সেনাদের দেখে ভয়ে পিছু হঠা দূরে থাক, তিনি সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছেন তাদের। অকুতোভয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, তারা কে? এখানে কী করছে? সেনারা জানিয়েছিল, তারা ওই মাঠে শরীরচর্চা করবে। ওই মহিলাকে সেখান থেকে চলে যেতেও বলে তারা। কিন্তু তিনি চলে তো যানই নি, উলটে প্রশ্ন করেছেন এরা রুশ সেনা কি না। আর উত্তরে হ্যাঁ শোনা মাত্রই যুদ্ধের সমস্ত রাগ উগরে দিয়েছেন তাদের উপরেই। তাঁর নিজের দেশকে যারা আক্রমণ করেছে, তারা যে বহিরাগত এবং ফ্যাসিবাদী, সে কথা বলতে ছাড়েননি তিনি। অভিশাপ দিয়েছেন তাদের। একইসঙ্গে বলেছেন, যে মাঠে তারা শরীরচর্চা করতে এসেছে, সেখান থেকেই বরং সূর্যমুখী ফুলের বীজ তুলে নিজেদের পকেটে রেখে দিক ওই সেনারা। তাহলে তাদের মৃত্যুর পর ফুটে উঠবে সূর্যমুখী ফুল। যুদ্ধে যে রুশ বাহিনীর হার হবেই, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হাতে যে মৃত্যুবরণ করবে রুশ সেনারা, সে কথাই যেন ঘুরিয়ে বলেছেন ওই মহিলা। পাশাপাশি যেন বার্তা দিতে চেয়েছেন, যুদ্ধের ভূমিতেই ফুটে উঠুক সূর্যমুখী ফুলের গুচ্ছ। সৌন্দর্যের কাছে হেরে যাক যুদ্ধ। কেবল ইউক্রেন নয়, এ তো গোটা পৃথিবীর শান্তিকামী মানুষেরই মনের কথা। আর তাই এই কথোপকথন দেখে আবেগে ভাসছে নেটদুনিয়া।