রাশিয়ার আকস্মিক হামলায় তছনছ হয়ে গিয়েছে ইউক্রেন। আগুন জ্বলছে রাজধানী শহর কিভে। কিন্তু ময়দান ছাড়তে নারাজ ইউক্রেনের মানুষ। চলতি বছরের প্যারালিম্পিকের আসরেও সেই কথাই বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
দেশের বাতাসে বারুদের গন্ধ। প্রাণভয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন দলে দলে মানুষ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। তবুও, এর মধ্যেই জয়ের বার্তা দিল ইউক্রেন। তবে লড়াইয়ের নয়, খেলার ময়দানে। চলতি বছরের শীতকালীন প্যারালিম্পিকের আসরে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করল ইউক্রেন। আর সেইসঙ্গেই বিজয়ী দলের সদস্যেরা বার্তা দিলেন, খেলাই হোক, কি যুদ্ধ, কিংবা জীবন, ময়দান ছেড়ে যাবেন না ইউক্রেনের মানুষ। তাঁরা শেষ পর্যন্ত লড়বেন, এবং শেষমেশ জয়ও হবে তাঁদেরই, এমনটাই মনে করছেন ইউক্রেনবাসী।
আরও শুনুন: হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছেন ওষুধ, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ইউক্রেনবাসীকে দেশ ছাড়তে সাহায্য করছেন শিখ দম্পতি
চলতি বছরের শীতকালীন প্যারালিম্পিকের আসর বসেছিল বেজিংয়ে। বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের জন্যই এই অলিম্পিকের আয়োজন করা হয়। আর সেখানেই পদকের হিসেবে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে ইউক্রেন। ছটি সোনা, সাতটি রুপো ও চারটি ব্রোঞ্জ সহ তার ঝুলিতে এসেছে মোট ১৭টি মেডেল। আর এই সাফল্যের সূত্র ধরেই মঙ্গলবার ইউক্রেনের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করা হয়েছে একটি ভিডিও। জাতীয় পতাকা হাতে, জাতীয় দলের জার্সি পরা একদল মানুষকে দেখা যাচ্ছে সেখানে। তাঁদের মধ্য থেকেই হুইলচেয়ারে বসা একজন মানুষ দেশবাসীকে জানিয়েছেন নিজেদের বক্তব্য। বলেছেন, প্যারালিম্পিকের প্রতিযোগিতাও তাঁদের কাছে দেখা দিয়েছিল আরেকরকম যুদ্ধ বলেই। যে আসরে দেশকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য লড়েছেন তাঁরা। যেমনভাবে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার জন্য লড়াই চালাচ্ছেন ইউক্রেনবাসীরা। আসলে লড়াইটা সব জায়গাতেই এক, কেবল তার চেহারা আলাদা। দেশের মাটিতে যুদ্ধ করাই হোক বা দেশের বাইরের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, সব লড়াই আদতে দেশের জন্যই। তাই এই জয় ইউক্রেন এবং তার নাগরিকদের উদ্দেশেই উৎসর্গ করেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: রুশ কবল থেকে বাঁচাতে হবে শহর! ব্যস্ত হাতে ব্যারিকেড গড়ছে একদল খুদে
দেখতে দেখতে কুড়ি দিনে পা দিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের পরিণতি কোনদিকে গড়াবে, তা নিয়ে কেবল এই দুই দেশ নয়, গোটা বিশ্বই উদ্বিগ্ন। দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক, আমেরিকা-ভারত-সহ অন্যান্য দেশের হুঁশিয়ারি কিংবা যুদ্ধ বন্ধ করার আরজি, কোনও কিছুতেই ইতিবাচক ফল মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া পিছু না হটলে শুরু হয়ে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, এই আশঙ্কায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে বাকি দুনিয়া। আর এই প্রসঙ্গ তুলেই বিজয়ী প্যারালিম্পিক দলের তরফে বলা হয়েছে, কেবল স্বদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বকে এক রক্তক্ষয়ী মহাযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই লড়ছে ইউক্রেন। পৃথিবীর মানুষকে এই কথা মনে রাখার জন্যই আরজি জানিয়েছেন তাঁরা। সঙ্গে স্পষ্ট করে দিয়েছেন এ কথাও, যে, যত বিপত্তিই আসুক, পিছু হটছে না ইউক্রেন।