কলেজেই তৈরি করতে হবে সেলফি জোন। তাতে থাকবে কেবল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নানা ছবি। আর তার সামনেই ছবি তুলতে পারবেন পড়ুয়ারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে এবার এমনই নির্দেশ দিল ইউজিসি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ, অর্থাৎ পড়াশোনা করাই ছাত্রদের ধর্ম, এমন কথাই বলা হত এককালে। কিন্তু দিন বদলে গিয়েছে। এবার দেখা গেল, পড়াশোনা নয়, একেবারে অন্য একটি বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় অনুদান আয়োগ, অর্থাৎ ইউজিসি। সাধারণত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাবিষয়ক নানা পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনার কথাই জানায় এই কেন্দ্রীয় দপ্তর। কিন্তু সম্প্রতি ইউজিসি-র তরফে যে নির্দেশ এসেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির কাছে, তার সঙ্গে শিক্ষার কোনও যোগ সে অর্থে নেই। জানা গিয়েছে, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একটি বিশেষ সেলফি পয়েন্ট গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নানা সময়ের, নানা ভঙ্গির ছবি, কাট আউট থাকবে ওই সেলফি জোনের ব্যাকড্রপে। জি-২০ সম্মেলন, চাঁদে অভিযান ইত্যাদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখার কথা বলা হয়েছে। আর তার সামনে দাঁড়িয়েই সেলফি তুলবেন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, শিক্ষক কিংবা অন্যান্য অতিথিরা। সেলফি তোলার জন্য তাঁদের উৎসাহ দেওয়ার কথাও কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিয়েছে ইউজিসি। প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই সেলফি পয়েন্ট তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন ইউজিসি সচিব মনীশ যোশী।
আরও শুনুন: নেহরুর ধর্মনিরপেক্ষতায় ফেরার দরকার নেই, মত জেএনইউ-এর অধ্যাপিকার
সাধারণত শপিং মল, রেস্তরাঁ, পার্ক এমন সব বিনোদনের জায়গায় এখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে সেলফি জোন। সবার চোখে পড়ার মতো কোনও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সেক্ষেত্রে বিশেষ আলো কিংবা ছবি দিয়ে সাজানো হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন অনেকেই। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তেমন কোনও স্থান আলাদা করে থাকার কথা নয়। সেই প্রেক্ষিতে খোদ ইউজিসি-র এহেন নির্দেশ শুনে খানিক চমকেই গিয়েছে শিক্ষামহল। যদিও কেন্দ্রীয় দপ্তরের দাবি, ভারতের অভূতপূর্ব উন্নতির সঙ্গে তরুণ সমাজ, বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনকে যুক্ত করতে এই সিদ্ধান্ত। যদিও শিক্ষাজগতের অভ্যন্তরে শোনা যাচ্ছে ভিন্ন সুর। অনেকের বক্তব্য, আসলে লোকসভা ভোটের আগে এইভাবেই ঘুরিয়ে মোদি আমলের সাফল্যের প্রচার করতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আর তাই যুবসমাজকে নিশানা করতেই এহেন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে অভিমত তাঁদের।
প্রধানমন্ত্রী মোদির আমলে ভারত সর্বক্ষেত্রেই সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছে, এমন বক্তব্যে বারে বারেই সরব হয়েছে বিজেপি। নির্বাচনের আগে নানা প্রকল্পে সেই কথাটিকে প্রচার করতেও জোরকদমে ঝাঁপিয়েছে তারা। এবার কি সেই পরিকল্পনায় জুড়ে নেওয়া হল শিক্ষাক্ষেত্রকেও, এই প্রশ্নই আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহলে।