টু ফিঙ্গার টেস্ট মেয়েদের মর্যাদাহানি করে, এই যুক্তিতে সম্প্রতি বিতর্কিত পরীক্ষাটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু কেবল ভারতই নয়, পৃথিবীর আরও কিছু দেশেও জারি ছিল এই টেস্ট। ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া নয়, উলটে সতীত্বের প্রমাণ দেওয়ার জন্যও এই পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া হত। যেমন ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীতে মেয়েদের যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা ছিল এই টু ফিঙ্গার টেস্টও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাইলে পাশ করতে হবে সতীত্বের পরীক্ষায়। আর সেই কারণেই, সে দেশের কোনও মেয়ে জাতীয় সেনাদলে যোগ দিতে চাইলে তাঁকে বিতর্কিত টু ফিঙ্গার টেস্ট পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এমনকি কোনও মহিলা কোনও সেনা আধিকারিককে বিয়ে করতে চাইলে তাঁর ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষা প্রযোজ্য। কোনও কোনও স্কুলেও ছাত্রী ভরতির সময়ও এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সে দেশে। হ্যাঁ, ইন্দোনেশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই জারি ছিল এই প্রবণতা। যে নিয়মকে মেয়েদের পক্ষে অবমাননাকর বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্বের একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। প্রতিবাদ উঠেছে দেশের ভিতর থেকেও। প্রতিবাদের জেরে গত কয়েক বছর ধরে এশিয়া মহাদেশের একাধিক দেশেই নিষিদ্ধ হয়েছে এই বিতর্কিত পরীক্ষা। যে তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন ভারত। এই পরিস্থিতিতে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার ওই আপত্তিকর নিয়মের প্রসঙ্গ, কিছুদিন আগেই যে নিয়মে দাঁড়ি টানার কথা ঘোষণা করেছে সে দেশের প্রশাসন।
আরও শুনুন: পাকিস্তানের প্রেম-কথা! সামাজিক চোখরাঙানি এড়িয়ে ৫২-র শিক্ষককেই বিয়ে ২০-র ছাত্রীর
কোনও মহিলা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিশ্বের অনেক দেশেই টু ফিঙ্গার টেস্টের সাহায্য নেওয়া হয়। যে পরীক্ষায় যাচাই করা হয়, ওই মহিলার হাইমেন তথা সতীচ্ছদ অটুট রয়েছে কি না। কিন্তু এই গোটা প্রক্রিয়াটি ঘিরে বারেবারেই প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বজুড়ে। চিকিৎসকদের মতে, কেবল যৌন মিলনের ফলেই নয়, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা বা নাচের মতো শারীরিক পরিশ্রমের একাধিক কাজেও ওই পর্দাটি ছিঁড়ে যেতে পারে। ফলে এইভাবে ধর্ষণের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় না বলেই মনে করেন তাঁরা। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই আলাদা। ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়ার জন্য নয়, উলটে সতীত্বের প্রমাণ দেওয়ার জন্যই সেখানে মেয়েদের এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হত। ১৯৬৫ সাল থেকে সে দেশের সেনাবাহিনীতে মহিলাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নিয়ম চলে আসছে বলে জানা যায়। অনেকে সেনা আধিকারিকের মতে, যিনি সেনা হিসাবে দেশের সেবা করতে চান তাঁকে মানসিক এবং শারীরিক দিক থেকে অত্যন্ত দৃঢ় হতে হবে। আর সতীত্বকেই সেই দৃঢ়তার পরিচয় বলে মনে করেন তাঁরা। এমনকি ২০১৪ সালেও ইন্দোনেশিয়া পুলিশে নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তিতে সাফ জানানো হয়, যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি মহিলাদের ‘সতীত্বের’ প্রমাণ দেওয়া বাধ্যতামূলক। ২০১৩ সাল নাগাদ ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু স্কুলও ছাত্রী ভরতির সময় এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেয়। এমনকি ২০১৯ সালে পশ্চিম জাভার এক জিমন্যাস্টকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি একই কারণে।
আরও শুনুন: মহিলাদের গোপনাঙ্গের ছবি দেখার শখ, স্ত্রীরোগ-বিশেষজ্ঞা সেজে প্রায় ১০০০ ছবি সংগ্রহ ব্যক্তির
এই মনোভাবের বিরুদ্ধে বারেবারেই সরব হয়েছে সে দেশের মানবাধিকার কমিশন। প্রতিবাদ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা, অনেক মহিলাও। এই নিয়ম মেয়েদের প্রতি একইসঙ্গে বৈষম্যমূলক এবং অবমাননাকর, ২০১৫ সালে এ কথা বলে ইউরোপীয় কমিশন। এমনকি সে দেশের খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী, নিলা ময়লোয়েকও সেসময়ে এই নিয়মের সমালোচনা করেন। প্রতিবাদের জেরে শেষমেশ কয়েক মাস আগে এই নিয়মে দাঁড়ি টেনেছে ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন। একইভাবে প্রায় সমসময়ে টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে পড়শি দেশ পাকিস্তানেও। আর এবার এই বিতর্কিত পরীক্ষায় ইতি টানল ভারতও।