নাগরিকত্বের সঙ্গে সম্পত্তির অধিকারের বিষয়টি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে হলে পুরুষরা যে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন, এমন নন। তবে, একই সঙ্গে মহিলারাও সেই অধিকার সমান ভাবে পান। মহিলা, বিশেষত মুসলিম মহিলাদের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত জরুরি।
বিয়ের বাঁধনে বাঁধা পড়েছিলেন ৩৬ বছর আগে। শরিয়া আইন মেনে। এতদিনের দাম্পত্য। তার পরেও স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুসলিম দম্পতি। নিজেদের বিয়েকে নতুন ভাবে দেখা শুধু নয়, বিয়ের মাধ্যমে লিঙ্গসাম্যের বার্তাটিও ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হচ্ছে নোবেলজয়ীর বক্তব্য, সাঁতরে-হেঁটে বাংলাদেশ ছাড়ছেন হিন্দুরা
তিন দশক আগে ইসলামিক আইন মেনেই বিয়ে হয়েছিল কেরলের এই দম্পতির। তার পরে কেন এই সিদ্ধান্ত? দম্পতির বক্তব্য, তাঁদের এই পদক্ষেপে সমাজের মধ্যে আলোচনা শুরু হোক, এমনটাই তাঁদের ইচ্ছা। শরিয়া আইনে উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যা নিয়মকানুন তা এখনকার দিনের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে না। এবং তাঁদের মতে সেই পুরনো ধারণা কখনই লিঙ্গসাম্যের কথা বলে না। সেই পুরনো চিন্তায় বদল আসুক, এবং এই নিয়ে সমাজের ভিতরেই কথোপকথন চালু হোক, এটাই তাঁদের কাম্য। আর তাই তিন দশকের সুখী দাম্পত্যের পরে, মানবাধিকার দিবসে তাঁরা আইনি মতে আবার বিয়ে সেরেছেন। তাঁদের মতে, প্রথা বা নিয়মের নাম করে এমন অনেক কিছুই প্রচারিত ও প্রচলিত হয়ে রয়েছে, যা ধর্মের মূল ভাবনার পরিপন্থী। এবং তা অসাম্য বয়ে আনে। অর্থাৎ তাঁদের মতে, কোনও ধর্মই অন্যায্য কোনও কিছুর কথা বলে না। অথচ ধর্মের নাম করেই তা দীর্ঘদিন প্রচলিত আছে। তাই তাঁদের মতে, সমাজ এবং সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেই সেই গণ্ডি কেটে বেরিয়ে আসা উচিত। আর তা সম্ভব যদি, সমাজের ভিতরই সেই আলোচনা শুরু হয়। তাঁদের আশা, নতুন করে তাঁরা যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন, এই দৃষ্টান্তই সেই কথোপকথন শুরু করবে। আনুষ্ঠানিক বিয়ের পর তাই এই বিষয়ে এক আলোচনা চক্রেরও আয়োজন করা হয়েছিল।
আরও শুনুন: গার্হস্থ্য হিংসার শিকার পুরুষ! আইনের অপব্যবহার কি কমজোরি করবে নারীদের অধিকার?
তাঁদের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মতে, নাগরিকত্বের সঙ্গে সম্পত্তির অধিকারের বিষয়টি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে বিয়ে হলে পুরুষরা যে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন, এমন নন। তবে, একই সঙ্গে মহিলারাও সেই অধিকার সমান ভাবে পান। মহিলা, বিশেষত মুসলিম মহিলাদের ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত জরুরি। যখন মহিলারা নানাবিধ সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবদমনের শিকার, তখন এই অধিকারের জায়গাটি সবার আগে সুনিশ্চিত হওয়া দরকার। আর সেখান থেকেই যেমন সাম্যের ধারনা বিস্তার লাভ করবে, তেমনই রুখে দেওয়া সম্ভব হবে অবদমন। এই প্রেক্ষিত থেকেই দম্পতির পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে। দম্পতির আশাও এই আলোচনা সমাজের সর্বস্তরেই ছড়িয়ে পড়ুক।
ছবিঋণ: ইন্টারনেট