এক দেশ, এক নির্বাচন। কেন্দ্র এবার উদ্যোগী নয়া এই নীতিতে। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধীরা। এই সংক্রান্ত কমিটিতে থাকতে নারাজ হয়েছেন অধীর চৌধুরী। তাঁর মতে, এই সবটাই চোখে ধুলো দেওয়ার ছুতো। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে এই নীতি নিয়ে কেন এগিয়ে যেতে চাইছে কেন্দ্র? কী ভাবছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
এক দেশ, এক নির্বাচন। এই নীতি কি কার্যকর হতে পারে আমাদের দেশে? সদ্য এ নিয়ে উদ্যোগী হয়েছে মোদি সরকার। কীভাবে এর বাস্তবায়ন সম্ভব, তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটিও গড়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিনের নির্বাচনী পদ্ধতিতে হঠাৎ বদল আনার কথা কেনই বা ভাবছে কেন্দ্র? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, বিজেপি সরকারের এই ভাবনার নেপথ্যে কাজ করছে মোদি ফ্যাক্টর-ই।
আরও শুনুন: ‘ভারতীয় মাত্রেই হিন্দু নয়’, সংঘ প্রধানের হিন্দু রাষ্ট্রের দাবি উড়িয়ে পালটা সপা নেতার
সন্দেহ নেই যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হলেন বিজেপির তুরুপের তাস। তাঁর ব্যক্তিত্ব, বক্তৃতা- সব মিলিয়ে এক ধরনের চুম্বক সম্মোহনী আছে, যা এখনও এ দেশের বহু মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছে। কেন্দ্রীয় নীতি নিয়ে বিরোধীদের বহু যুক্তিপূর্ণ কথারও সলিলসমাধি হয়েছে এই মোদি-ঘাটে এসেই। এখনও তাঁর জনপ্রিয়দার লেখচিত্র নিম্নগামী নয়। বহু সমালোচনা ইতিমধ্যে জমা হয়েছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন সরকারে থাকলে ক্ষমতার গায়ে যে শ্যাওলা এসে জমা হয়, এক্ষেত্রেও যে তা হয়েছে, তা বিচক্ষণ বিজেপি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক বিলক্ষণ জানে। তবে এই সব ক্ষেত্রেই তাঁদের স্বস্তির আশ্রয় হলেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর জনপ্রিয়তায় ভর করে এখনও নির্বাচনী যুক্তিকে উড়িয়ে বৈতরণী পার হওয়া যে যায়, তা নিয়ে খুব একটা দ্বিমতের জায়গা নেই। ঠিক সেই জায়গা থেকেই বিজেপির কাছে আশীর্বাদ হতে পারে ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ নীতি, মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
আরও শুনুন: সহপাঠীদের হাতে মার থেকে অনাহারের নিদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাস্তিতেও কি ‘র্যাগিং’-এর ছায়া?
বিজেপি ক্ষমতায় নেই, এমন রাজ্যের সংখ্যা এই মুহূর্তে ১৪। তা যদি সংখ্যায় আগামীতে বাড়ে, তবে নিঃসন্দেহে গেরুয়া শিবিরের কাছে তা মাথাব্যথার কারণই বটে। এদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইন্ডিয়া জোটের শক্তি। আসন-রফার অঙ্কে বিরোধী দলগুলি যদি নিজেদের মধ্যে সমঝোতার জায়গা সত্যিই গিয়ে পৌঁছাতে পারে, তবে তা বিজেপির জন্য খুব একটা শুভ সংকেত নয়। ঠিক সেই বিন্দুতেই মোদি ফ্যাক্টরকে কাজে লাগাতে চাইছে তারা। অর্থাৎ যদি এক দেশ, এক নির্বাচন বাস্তবায়িত হয়, তবে সমস্ত ভোটই হবে অন্যরা বনাম মোদি। বিজেপি বরাবরই এই সমীকরণ পছন্দ করে। পরীক্ষিত এই পদ্ধতিতে তাঁরা দু-একটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে ভাল ফলই করেছে। অর্থাৎ ভোট টানতে মোদির মুখই একমাত্র কার্যকরী- এইটি যদি বিজেপির দুর্বলতা হয়, তবে সেটাই শক্তি হয়ে উঠতে পারে, নয়া এই নীতিতে। ইতিমধ্যে কেন্দ্রের সমস্ত জনপ্রকল্পমূলক কাজের সুফলের প্রচার সমাজের একেবারে নিচুস্তরেও প্রচারের পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। অর্থাৎ দেশের গরিব, পিছিয়ে পড়া শ্রেণির জন্য যে মোদি সরকার গত এক দশকে কাজ করেছে, তা যেন তাঁরা সম্যক জানেন। সেই প্রচারের সূত্র ঢরেই ভোটটা যদি মোদি বনাম অন্য কেউ হয়, তবে, স্বাভাবিক ভাবেই ভোটের লক্ষ্মী গেরুয়া-শিবিরের দিকে আসবে। রাজনৈতিক চর্চাকারীদের মতে, এক দেশ এক নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রের এই তৎপরতার মূল রহস্য এটাই। তবে আদৌ এই নীতি কার্যকর হবে কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন।