মুক্তির আগে থেকেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু শাহরুখ খানের ‘পাঠান’। মুক্তির পরেও সেই বিতর্ক কমছে না। ‘পাঠান’ বয়কটের দাবিতে এখনও উত্তপ্ত দেশের কোনও কোনও অঞ্চল। এই আবহেই ‘পাঠান’ না দেখার যুক্তি দিলেন এক বিজেপি নেতা। কী যুক্তি তাঁর? আসুন শুনে নিই।
মুক্তির প্রথম দিনেই মেগা ব্লকবাস্টারের তকমা পেয়েছে শাহরুখ খানের ‘পাঠান’। সিনেজগতের ট্রেড অ্যানালিস্টরা বলছেন, হিন্দি সিনেমার সাম্প্রতিক খরা কাটিয়ে দিতে পারবে এই সিনেমা। তবে এই সিনেমাকে ঘিরে যে রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত, তা কিন্তু এখনও কমছে না।
আরও শুনুন: ‘দ্বেষের দেশ’ ভোলাল ‘পাঠান’, বয়কট-ড্রাগ পেরিয়ে পর্দায় যেন ভারত-জোড়ো শাহরুখের
ছবির ‘বেসরম রং’ গানটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বিতর্কের শুরু। এই গানে গেরুয়া বিকিনিতে দেখা গিয়েছিল ছবির নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোনকে। ছবিতে তাঁর নাচের ধরন যে অশ্লীল, এ অভিযোগও উঠেছিল। সব মিলিয়ে গেরুয়া রংকে অপমান করা হয়েছে বলেই বিক্ষুব্ধ হয়েছিলেন অনেকে। মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্রই বিজেপি নেতাদের মধ্যে প্রথম ছবি বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। অসমেও পাঠান-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। যার জেরে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে কথা বলেন খোদ শাহরুখ। প্রথমে শাহরুখকে গুরুত্ব দিতে অস্বীকার করলেও সুর নরম করেন হিমন্ত। ছবিকে ঘিরে গোড়া থেকেই তাই রাজনৈতিক মতভেদ ছিল জোরালো। এদিকে ছবির প্রাথমিক সাফল্যের পর হাওয়া অনেকটাই বদলাতে শুরু করেছে। নরোত্তম মিশ্র জানিয়েছেন, ছবিতে যা যা আপত্তিকর ছিল, তা ইতিমধ্যেই দেখে নিয়েছে সেন্সর বোর্ড। হয়েছে প্রয়োজনীয় কাটছাঁট। এখন আর পাঠান-কে নিয়ে আপত্তি তোলার কোনও অর্থ হয় না। যদিও তাঁর কথায় চিড়ে তেমন ভেজেনি। বিক্ষোভ এখনও জারি আছে।
আরও শুনুন: মাসে কত উপার্জন করেন? ফ্যানের প্রশ্নে প্রকাশ্যে সত্যিটা বলেই দিলেন শাহরুখ
এই রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই ‘পাঠান’ না-দেখার পক্ষে নিজস্ব যুক্তি জানিয়েছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা। সাম্প্রতিক অতীতে আর-একটি ছবি তীব্র রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। তা হল বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘কাশ্মীর ফাইলস’। পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তিনি ‘কাশ্মীর ফাইলস’ দেখেছেন, কিন্তু ‘পাঠান’ দেখতে চান না। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ছবি দেখার বিশেষ সময় হয় না তাঁর। ৪-৫ বছরে হয়তো একটিই ছবি দেখা হয়ে ওঠে। আর সেই ছবিটি তিনি বেশ ভাবনাচিন্তা করেই দেখেন। তাঁর মতে, যে ছবিটি বাস্তবকে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, সেরকম ছবি দেখতেই তিনি পছন্দ করেন। তাই দেখেছিলেন ‘কাশ্মীর ফাইলস’। উলটোদিকে পাঠান হল কাল্পনিক ঘটনা। তাই এই ছবি দেখার ইচ্ছে তাঁর নেই।
I watch one film in 4-5 years and I prefer stories based on reality rather than fiction so I saw #KashmirFiles
Loved it 😊 Aap bhi zaroor dekhna https://t.co/dbilKVwW6f
— Shehzad Jai Hind (@Shehzad_Ind) January 26, 2023
শেহজাদ তাঁর নিজস্ব মতামত জানালেও, ‘পাঠান’-কে ঘিরে এখন রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেই চলছে বাক-বিতণ্ডা। গোড়ায় নরোত্তম মিশ্র এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মা পাঠান-এর বিপক্ষেই ছিলেন। কিন্তু পরে তাঁদের মতামত অনেকটাই বদলেছে। আর তা নিয়ে দুই নেতাকেই কটাক্ষ করেছেন আপ সাংসদ নরেশ বল্যান। তাঁর মতে, পাঠান-এর মোট ব্যবসার ১ শতাংশ শেয়ার দেওয়া উচিত এই দুই নেতাকে। কেননা ঘুরিয়ে তাঁরা ‘পাঠান’ ছবিটিকে প্রমোটই করেছেন। হিন্দি সিনেমার সুদিন পাঠান কতটা ফেরাতে পারবে, তা আগামী কয়েকদিনেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। তবে বিতর্কিত বাস্তব ঘটনা বা কোনও ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে তৈরি না হয়েও, এই ছবি যেভাবে রাজনীতিতে চর্চার বিষয় উঠেছে, তার নমুনা বিরলই বলা যায়।