আমিষ খাওয়া আইনত অপরাধ! অবশ্য চাইলেই যে খাওয়া যাবে তা নয়। কারণ শহরজুড়ে হাজার খুঁজলেও মিলবে না কোনও আমিষ খাবারের দোকান। মাছ, মাংস, ডিম সবকিছুই নিষিদ্ধ এই শহরে। কেন জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
লোকসভা ভোটে মাছ মাংসই যেন হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক হাতিয়ার। ভোটের হাওয়ায় আমিষ-নিরামিষে রীতিমতো দ্বন্দ্ব বেধেছে বারবার। তবে সেসব নেহাতই রাজনৈতিক তরজা। আমিষ খেলে শাস্তি হবে এমন ফতোয়া জারি করেনি কেউ। ভোট মিটতে ঠিক তেমনটাই হতে চলেছে। একটা গোটা শহর, সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে আমিষদ্রব্য।
:আরও শুনুন:
যত দোষ আমিষে! অথচ মাছ-মাংস নয়, ভোটের হাওয়া ঘোরাল ডাল-সবজিও
ভোটের ময়দানে মাছ মাংসের কথা তুলে বিরোধীদের নিশানা করাটা একরকম অভ্যাস করে ফেলেছিলেন মোদি। যেন দেশে যা কিছু খারাপ ঘটছে, সবেরই দোষ একা আমিষের। কখনও রাহুল-লালুর শ্রাবণ মাসে মাংস রান্নার ছবি, কখনও আবার তেজস্বীর নবরাত্রির সময় মাছ খাওয়া, একযোগে সবকিছুকেই তুলোধোনা করেছেন তিনি। একে ‘মুঘল মানসিকতা’ বলে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়েননি। রাজনৈতিক মহলের মত, এ সবকিছুর মধ্যে দিয়েই আসলে হিন্দু-মুসলিম বিভাজনের রাজনীতিতে আরও শান দিতে চেয়েছিল বিজেপি। ভোটের পরও সেই আমিষ-নিরামিষ দ্বন্দ্ব কাটছে না। বরং বলা ভালো, আমিষকে দশ গোল মাঠ দখল করেছে নিরামিষ। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সম্প্রতি গুজরাটের পালিতানা নামে এক শহরে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে আমিষ। রাতারাতি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে শহরের সমস্ত মাছ-মাংসের দোকান। কড়াভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ প্রকাশ্যে আমিষদ্রব্য বিক্রি করতে পারবে না। পশুহত্যা বা মৃত পশু সামনে ঝুলিয়ে রাখা আইনত অপরাধ হিসেবেই গণ্য হবে। কেউ লুকিয়ে এমনটা করলেও মিলবে না ছাড়। কোনওভাবে ধরা পড়লেই কপালে জুটবে কড়া শাস্তি।
:আরও শুনুন:
আমিষ-নিরামিষে দ্বন্দ্ব অহর্নিশ! বহু রূপে সম্মুখে ফিরছে জাতের ভাগাভাগিই?
কিন্তু এমন নিয়মের নেপথ্যে কারণ কী?
জানা গিয়েছে, গুজরাটের এই শহরে মূলত জৈনদের বাস। সবসময় অহিংসার প্রচার করে আসা এই সম্প্রদায়ের মানুষজন আমিষদ্রব্য ছুঁয়েও দেখেন না। কাজেই শহরের ইতিউতি মাছ-মাংসের দোকান বর অস্বস্তিতে ফেলছিল তাঁদের। বারবার প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। তাই সকলে এক হয়ে প্রতিবাদে নামেন পালিতানা শহরের জৈনরা। প্রায় ২০০জন জৈন সন্ন্যাসী এই নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। আর তাতেই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। জৈন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা চিন্তা করেই শহরের ২৫০টিরও বেশি মাংসের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কড়া নজর রাখা হচ্ছে কেউ যেন লুকিয়ে আমিষ বিক্রি না করতে পারেন। এর আগে অযোধ্যায় রামমন্দির প্রতিষ্ঠাকে সামনে রেখে আমিষ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। মন্দির চত্বর সহ বেশ কিছু জায়গায় এখনও নিষিদ্ধ আমিষ। সেই পথে হেঁটেই আমিষ বন্ধ হল গুজরাটের এই শহরে। কিন্তু আস্ত একটা শহরে সম্পূর্ণভাবে আমিষ নিষিদ্ধ এর আগে হয়নি। বলা ভালো গোটা বিশ্বে এমন নজির প্রথমবার। তবে স্রেফ জৈন ভাবাবেগ নয়, গুজরাটের এই শহরে ৮০০-রও বেশি মন্দির রয়েছে। আমিষ বন্ধের নেপথ্যে এও এক বর কারণ বলেই মনে করছেন কেউ কেউ।