লাউডস্পিকার বিতর্ক নিয়ে সরগরম দেশ। সরব রাজনৈতিক নেতৃত্বরাও। কিন্তু এরই মধ্যে সম্পূর্ণ উলটো পথে হাঁটল বিহার। ধর্মীয় বিভাজনের হাওয়ায় গা না ভাসিয়ে সম্প্রীতির নজির গড়লেন সেখানকার মানুষ। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কাছের মসজিদে শুরু হচ্ছে আজান। আর সেই ধর্মীয় রীতিকে সম্মান জানিয়ে লাউডস্পিকার বন্ধ করল মন্দির। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ নয়, বরং সুস্থ সম্পর্ক কেমন হতে পারে, তাই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা। ধর্মস্থানে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিয়ে যখন প্রায় দুই দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে সারা দেশ, সেই সময়েই এমনই অভিনব ঘটনা ঘটল বিহারে।
আরও শুনুন: দেশরক্ষাই প্রকৃত ধর্ম… মনে করিয়ে একযোগে নমাজ আদায় ভারতীয় সেনার
জানা গিয়েছে, পাটনায় অবস্থিত মহাবীর মন্দিরের ৫০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে একটি মসজিদ। কিন্তু মন্দির এবং সেখানে আসা ভক্তদের মধ্যে কখনোই আজান কিংবা নমাজের সুর নিয়ে কোনও আপত্তি ওঠেনি। অপর পক্ষে মসজিদের তরফ থেকেও ভজন কীর্তন নিয়ে বিরুদ্ধ মত শোনা যায়নি কখনও। উভয় পক্ষেই নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ বজায় রেখেছেন বলে জানিয়েছেন মহাবীর মন্দিরের চেয়ারম্যান কিশোর কুনাল। এর আগে রামনবমীর দিনে মন্দিরে আসা ভক্তদের জন্য শরবতের আয়োজন করেছিলেন মসজিদ কর্তৃপক্ষও। মসজিদের চেয়ারম্যান ফয়জল ইমামের মতে, এই সুস্থ সম্পর্কের জায়গা থেকেই অন্য ধর্মকে তার উপযুক্ত সম্মান দিতে পারছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: ‘বেকারত্বের উপর বুলডোজার চালাবেন কবে?’, তরুণীর ‘সাহসী’ প্রশ্ন বিজেপি মুখপাত্রকে
মসজিদে লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিয়ে প্রথম সুর চড়িয়েছিলেন রাজ ঠাকরে। তারপর থেকেই এই প্রসঙ্গে উত্তাল গোটা দেশের রাজনৈতিক মহল। মসজিদে আজান চলার পালটা জবাব হিসেবে লাউডস্পিকারে হনুমান চালিশা পাঠের উদ্যোগ নিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলগুলির একাধিক সদস্য। যোগী রাজ্যে ধর্মস্থান থেকে খুলে ফেলা হয়েছে বহু বেআইনি লাউডস্পিকার। আওয়াজ যাতে ধর্মস্থানের বাইরে না বেরোতে পারে, তারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মহারাষ্ট্র থেকে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে চলতে থাকা এই টানাপোড়েনের মধ্যে ভিন্ন সুরেই কথা বলেছিল বিহার। সম্প্রতি এই বিতর্ককে স্রেফ ‘ননসেন্স’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এই বিতর্ক আসলে সত্যিকারের সমস্যাগুলি থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিচ্ছে বলে সাফ জানিয়েছিলেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ শরিক হয়েও এই বিতর্ককে কার্যত উড়িয়েই দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কেবল রাজনৈতিক নেতৃত্ব নন, বিহারের সাধারণ মানুষের মধ্যেও যে একই ভাবনার ছোঁয়াচ লেগেছে, এবার সে কথাই প্রমাণ করে দিল এই সাম্প্রতিক ঘটনাটি।