পৌষ পেরিয়ে মাঘ। সন্ধিক্ষণের দিনটি সংক্রান্তি। পঞ্জিকায় একেই বলা হচ্ছে মকর সংক্রান্তি। সারা দেশেই এই দিনটির বিশেষ গুরুত্ব। বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন নিয়ম মানা হয় বছরের এই দিনে। তবে সব জায়গাতেই গঙ্গা স্নানের প্রবণতা চোখে পড়ে। কিন্তু কেন? কী এমন ফল মেলে এদিন গঙ্গাস্নান করলে? আসুন শুনে নিই।
বাংলা মাসের শেষদিন মানেই সংক্রান্তি। সেই হিসেবে ১২ মাসের শেষেই একবার করে সংক্রান্তি আসে। তবে পঞ্জিকায় পৌষ সংক্রান্তির গুরুত্ব বোধহয় সবথেকে বেশি। শুধু বাংলা নয়, গোটা ভারত জুড়েই এদিন বিশেষ কিছু আচার অনুষ্ঠান পালনের রেওয়াজ রয়েছে। তবে এর সবকিছুর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গঙ্গাস্নান।
আরও শুনুন: মকর সংক্রান্তিতে ওড়ানো হয় ঘুড়ি, জানেন কোন ভাবনা থেকে এল এই বিশেষ রীতি?
প্রথমেই বলি, মকর সংক্রান্তির কথা।
সেক্ষেত্রে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রসঙ্গ আসবে। আসলে মকর হল রাশিচক্রের অন্যতম অঙ্গ। রাশিচক্রে এর অবস্থান দশম স্থানে। ঠিক তার আগেই ধনু। জ্যোতিষ মতে, যে দিন সূর্যের অবস্থান এই ধনু থেকে মকরের দিকে গমন করে, তাকে মকর সংক্রান্তি বলে। পঞ্জিকায় এই দিনটিই পৌষ মাসের শেষদিন হিসেবে উল্লেখ থাকে। ইংরেজি হিসেবেও মোটামুটি এক থাকে প্রতিবছর। কখনও জানুয়ারির ১৪ আবার কখনও ১৫। সেই হিসেবে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ওই সময়টা বিশেষ উৎসবে মেতে ওঠে গোটা ভারত। কোথাও লোহরি, কোথাও ‘পোঙ্গল’, আবার কোথাও পিঠে পুলির উৎসব। সব মিলিয়ে একেবারে হই হই আমেজ। পুজো আচ্চার ব্যাপারও রয়েছে। যেমন গ্রামবাংলায় এই সময়টা শস্যের দেবী হিসেবে লক্ষ্মীকে পুজো করা হয়। কোথাও আবার এই উৎসবের দিনে আরাধনা করা হয় সূর্যের। নিয়মের ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈচিত্র। কোথাও ঘুড়ই ওড়ানোর রেওয়াজ তো কোথাও আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশ ঘুরে নাচ-গান। কোথাও আবার স্রেফ আনন্দ করে পিঠে খাওয়া। নানা রঙের আলপনায় বাড়ি সাজানো, কিংবা সবাই মিলে চড়ুইভাতি করা। সব মিলিয়ে এ অনুষ্ঠান আদতে মানুষের নিজের মাটির উৎসব। আবার এই দিনেই পবিত্র কুম্ভ স্নানের দিন। পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর বা জয়দেবের কেন্দুলিতে এই সময় থেকেই শুরু হয় মেলা।
আরও শুনুন: শস্য আর সূর্যদেবতার আরাধনা মকর সংক্রান্তিতে, কীভাবে দিনভর চলে উদযাপন?
তবে এর সঙ্গে গঙ্গার মর্ত্যে আগমনের কাহিনিটি বিশেষভাবে জড়িয়ে। কথিত আছে, এইদিনের কপিল মুনির আশ্রমে প্রবেশ করেছিলেন পুণ্যতোয়া গঙ্গা। সেইসঙ্গে মুক্তি পেয়েছিলেন রাজা সগরের ষাট হাজার পুত্র। সেই থেকেই মনে করা হয়, মকর সংক্রান্ত্রির দিনে স্নান অত্যন্ত পুণ্যের। আর ভারতবর্ষে পুণ্যতোয়া বলতে গঙ্গানদীকেই বোঝায়। তিনি পতিতোদ্ধারিণী। পুণ্যদায়িনী দেবী। মনে করা হয়, গঙ্গার পবিত্র স্পর্শে মুছে যায় সমস্ত কলুষ। যে কোনও পুজো গঙ্গাজল ছাড়া অসম্পূর্ণ। গঙ্গাজলই সমস্ত অপবিত্রকে পবিত্র করে তুলতে পারে। তাই পবিত্র মকর সংক্রান্তির দিনে এই স্নানের যথষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।