তালিবানের দখলে আফগানিস্তান। গোটা বিশ্বেই পড়েছে তার প্রভাব। আফগানিস্তান জুড়ে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। দেশ ছেড়ে পালাতে মরিয়া মানুষ। জনসমুদ্র বিমানবন্দরে। বিমানে উঠছেন শয়ে শয়ে আতঙ্কিত মানুষ। ঠিক তার উলটো ছবি রত্তন নাথ মন্দিরে। পালাতে নারাজ পুরোহিত রাজেশ কুমার। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে তিনি আগলে আছেন মন্দির।
আতঙ্কের উলটো দিকেই ভয়হীনতা। হুড়োহুড়ি করে পালানোর বিপরীতে অচল নির্ভীক অবস্থান। কাবুলে যেন ধরা পড়ল ঠিক এরকমই ছবি। তালিবানি সন্ত্রাসের ভয়ে যখন শয়ে শয়ে মানুষ দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন, তখন নিজের মন্দির আগলেই পড়ে আছেন হিন্দু পুরোহিত রাজেশ কুমার।
আরও শুনুন – আবার কি ফিরছে যৌনদাসী প্রথা! অন্ধকার যুগের আতঙ্কে কাঁটা আফগান মহিলারা
প্রায় দু-দশকের স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে দিনকয়েকের মধ্যে। মার্কিন সেনা সরে যতে প্রায় রাতারাতি কাবুলের দখল নিয়েছে তালিবান। আবার কায়েম হচ্ছে তালিবানি শাসন। আর তাতেই আতঙ্কের স্রোত বয়ে গিয়েছে আফগানদের মধ্যে। ১৯৯৬-২২০১, সেই পাঁচ বছরের তালিবানি শাসনের স্মৃতি আজও ফিকে হয়নি। ধর্মীয় গোঁড়ামি আর উগ্রপন্থা মিলেমিশে যে শাসন আর অত্যাচার নেমে এসেছিল সাধারণ আফগানদের মধ্যে, বিশেষত মহিলাদের উপর, সে কথা ভেবেই শিউরে উঠেছেন আফগানরা। তাই দেশ ছাড়ার মরিয়া চেষ্টা করেছেন তাঁরা। বিমানবন্দরে জনসমুদ্র। একটি বিমানে উঠে পড়েছেন প্রায় ছশো-র বেশি মানুষ। কেউ কেউ বিমানে চাকা ধরে ঝুলতে ঝুলতেও পালাতে চেয়েছিলেন। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হয়েছে মৃত্যু।
আরও শুনুন – আফগানিস্তান ভাবাচ্ছে ভারতকে, তালিবানি আগ্রাসন সত্ত্বেও কেন মুখ ফিরিয়ে থাকল আমেরিকা?
এই যখন একদিকের ছবি, তখন উলটোদিকে শান্ত নির্ভীক হয়ে নিজের অবস্থানে অনড় পুরোহিত রাজেশ কুমার। পণ্ডিত রাজেশ কুমার কাবুলের রত্তন নাথ মন্দিরের পুরোহিত। যখন চারিদিকে দেশ ছাড়ার হিড়িক, তখন তাঁকেও পালাবার পরামর্শ দেন সহৃদয় প্রতিবেশীরা। দেশ ছেড়ে পালাতে পালাতে হিন্দু ভক্তরা বারবার তাঁকে অনুরোধ করেছেন সঙ্গে যাওয়ার। কিন্তু যে মন্দিরের সেবায় কেটে গিয়েছে তাঁর পূর্বপুরুষের জীবনে, তা ছেড়ে কেন যাবেন রাজেশ কুমার। মন্দির আগলেই তিনি পড়ে থাকবেন। এই তাঁর স্থির সিদ্ধান্ত। তিনি বলছেন, যদি তালিবানরা তাঁকে মেরেও ফেলে তাও সই। তিনি মনে করবেন, এই হল ঈশ্বরের উদ্দেশে তাঁর সেবা।
হিন্দু মন্দিরকে অতীতে তালিবানরা কী চোখে দেখেছে তা আজ কারও অজানা নয়। বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস করতেও তাঁদের হাত কাঁপেনি। সেখানে এই রতন নাথ মন্দিরের ভবিষ্যৎ কী হবে, সে বিষয়ে আজ নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। যেমন রাজেশ কুমার নিজেও জানেন না, তাঁর কী হবে ভবিষ্যতে। তবু সম্ভাব্য হত্যার মুখেও তিনি যে মন্দির আগলে পড়ে আছেন, এই সাহসকেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন বিশ্বের মানুষ।.