আফগানভূম তালিবানের দখলে যাওয়ার পরই দেখা গিয়েছিল দেশছাড়ার হিড়িক। শয়ে শয়ে মানুষ ভয়ে পালিয়েছে কাবুলিওয়ালার দেশ ছেড়ে। তবে, এর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্তও আছে। যাঁরা থেকে গিয়েছেন, তাঁদের কেউ কেউ তালিবানি মৌলবাদের প্রতিবাদও করেছেন। এবার সেই প্রতিবাদীদের দিকেই ছুটল তালিবানের গুলি।
তালিবান আছে তালিবানেই। বলা হচ্ছিল, নবপর্যায়ে তালিবান নাকি বেশ অন্যরকম। আগের কট্টর উগ্রপন্থা ছেড়ে তারা এখন আরও পরিকল্পিত ভাবে সরকার গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি অবশ্য তার উলটো সাক্ষ্যই দিচ্ছে। সম্প্রতি জানা গেল, জালালাবাদে চলছিল প্রতিবাদ। প্রতিবাদীদের দাবি ছিল, অফিসগুলির মাথায় উড়ুক আফগানিস্তানের জাতীয় পতাকা। এ প্রস্তাব তালিবানের না-পসন্দ। আর তাই প্রতিবাদীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাল তালিবানিরা।
আরও শুনুন: তালিবান মেরে ফেললেও মন্দির ছেড়ে পালাতে নারাজ হিন্দু পুরোহিত
ক্ষমতা দখলের পরে কাবুলিওয়ালার দেশে জাঁকিয়েই বসেছে তালিবানরা। সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কিছু ভিডিও-য় দেখা গিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট প্যালেসে খোশমেজাজে বসে তালিবান নেতারা। কেউ পার্কে জয়রাইড নিচ্ছে, কেউবা অন্যত্র হল্লা করছে। এই যখন একদিকে তালিবানি উল্লাসের ছবি, তখন তালিবানি শীর্ষ নেতারা ব্যস্ত সরকার গঠনে। বোঝা যাচ্ছে, তালিবানি উগ্রপন্থার বিপরীতে সুহেল শাহিনের মতো জনা কয়েক ‘প্রগতিশীল’ তালিবানি নেতাকে সামনে এনে নিজেদের সম্পর্কে ধারণা বদলাতে সচেষ্ট তালিবান। আফগানভূমে তালিবানের শিকড় যাতে গভীরে পৌঁছায় তারই উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।
আরও শুনুন: মোছা হচ্ছে বিজ্ঞাপনে মেয়েদের ছবি, তালিবানি ফতোয়ার রূপ দেখছে বিশ্ব
তালিবানদের বিরুদ্ধে সবথেকে বড় অভিযোগ যে, মহিলাদের বিরুদ্ধে তাঁরা নির্মম ও নিষ্ঠুর। এর আগে মহিলাদের হত্যা, ধর্ষণ, প্রকাশ্যে মার চলেছে যথেচ্ছভাবে। এবার সেই কট্টর অবস্থান থেকে খানিকটা সরেছে তালিবান। আগে নিষিদ্ধ হয়েছিল নারীশিক্ষা। ঘোষণা করে জানানো হয়েছে, মহিলাদের শিক্ষার অধিকার থাকবে। হিজাব বাধ্যতামূলক হলেও, বোরখার ক্ষেত্রে অতটা কড়াকড়ি নয়। তবে, এ কি শুধু তালিবানদের মুখের কথা, না বাস্তবেও এই ছবি দেখা যাবে তা নিয়ে ঘোর সংশয় আছে। তালিবানি শাসন কায়েমের গোড়া থেকেই সন্ত্রস্ত সে-দেশের মহিলারা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্কুলে যে মেয়েরা পড়ত তাঁদের আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকে ও অন্যান্য অফিসে কর্মরত মহিলাদেরও কাজে আসতে মানা করা হয়েছে। পর্দানশীন না হোয়ার কারণে এক মহিলাকে গুলি করে খুন করা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে খবরে। ফলে, তালিবানিদের তথাকথিত প্রগতিশীল ঘোষণার সঙ্গে তাদের বাস্তবের কর্মসূচি কতটা মিলবে, তা নিয়ে সন্দিহান গোটা বিশ্ব। তবে, তারা সাফ জানিয়েছে, যা হবে তা ইসলামিক আইন মোতাবেকই হবে।
আরও শুনুন: আবার কি ফিরছে যৌনদাসী প্রথা! অন্ধকার যুগের আতঙ্কে কাঁটা আফগান মহিলারা
ইতিমধ্যে, হোয়াইট হাউস স্বীকার করেছে যে, কাবুলের দখল নেওয়ার পর বিপুল পরিমাণে মার্কিণ অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করেছে তালিবানরা। ফলে, সামরিক দিক থেকে তারা যে এখন বেশ শক্তিশালী তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। ইতিমধ্যে সরকার গঠনের দিকেও বেশ কয়েক কদম এগিয়েছে তালিবানরা। অন্যান্য দেশের এখন মাথাব্যথা হল, তাঁদের দেশের মানুষকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনা। এবং সেই সঙ্গে তালিবানি উত্থানের জেরে বৈদেশিক সম্পর্কের সমীকরণ গুলি কেমন হবে সেদিকেই নজর রাখা। আপাতত নব পর্যায়ের তালিবান সরকার ঠিক কী পন্থা নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্ব।