টিজার: আফগানিস্তানের এক বিউটি পার্লারের সামনে থাকা মেয়েদের ছবি মুছে দেওয়া হচ্ছে সাদা রং দেখে। নেট দুনিয়ার সূত্রে ভাইরাল এই ছবি। তা দেখে উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। তালিবান দাপটে আফগান মেয়েদের অবস্থাটা বর্তমানে ঠিক কেমন?
আফগানিস্তানে পা রাখতে না রাখতেই ফতোয়া জারি। তাদের রাজত্বে কেমন হবে মেয়েদের আচার আচরণ, সে বিষয়ে লিখিত বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে তালিবান। সেই নিয়ম মেনে চলারই এক ঝলক সামনে এসেছে সম্প্রতি। নেটদুনিয়ায় বিপুলভাবে ছড়িয়ে পড়েছে একজন মানুষের ছবি। একটি বিউটি পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। সাদা রং দিয়ে সম্পূর্ণ মুছে দিচ্ছেন পার্লারের সামনে থাকা মেয়েদের ছবিগুলিকে। আর এই ছবি দেখেই তালিবান আমলে আফগান মেয়েদের অবস্থা কল্পনা করে শিউরে উঠছে সারা বিশ্ব।
আরও শুনুন: তালিবান মেরে ফেললেও মন্দির ছেড়ে পালাতে নারাজ হিন্দু পুরোহিত
সে-দেশের খবর অনুযায়ী, এই ছবিটি হিমশৈলের চূড়া মাত্র। গোটা আফগানিস্তান জুড়েই যেসব বিজ্ঞাপনে মেয়েদের ছবি ছিল, সেগুলি নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। কারণ তালিবানের সাফ নির্দেশ, কোনও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো চলবে না মেয়েদের। রেডিও বা টেলিভিশনের কোনও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। এমনকী কোনও বই বা সংবাদপত্রেও মেয়েদের ছবি থাকার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা। কুড়ি বছর আগেকার শাসনকালেও মেয়েদের শিক্ষা কিংবা কাজে যোগ দেওয়ার অধিকারকে নাকচ করেছিল তালিবান। কড়াকড়ি ছিল পোশাকবিধিতে। যদিও ক্ষমতায় আসার আগে হিজাব পরা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করলেও মেয়েদের অধিকারকে মর্যাদা দেবে বলে জানিয়েছিল তালিবান।
আরও শুনুন: আবার কি ফিরছে যৌনদাসী প্রথা! অন্ধকার যুগের আতঙ্কে কাঁটা আফগান মহিলারা
কিন্তু তারা শাসনভার হাতে নেওয়ার সময় থেকেই আফগানিস্তানের রাস্তাঘাট প্রায় মহিলাশূন্য। ভিড় বাড়ছে কেবল বোরখার দোকানে। তালিবানি বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাস্তায় বেরোনোর সময় মহিলাদের বোরখা ও হিজাব পরা বাধ্যতামূলক। অবশ্য রক্তের সম্পর্কযুক্ত কোনও পরিবারের সদস্য কিংবা স্বামী ছাড়া রাস্তায় বেরোনোর প্রশ্নই নেই। কোনও পুরুষের কানে যাতে পদশব্দ না পৌঁছয়, তাই হিল তোলা জুতো পরা চলবে না। প্রকাশ্য জমায়েতে অংশ নিতে পারবেন না তাঁরা। যাওয়া যাবে না বাড়ির বারান্দাতেও। রাস্তা থেকেও যাতে কখনও তাঁদের দেখা না যায়, সেজন্য বাড়ির সব জানলার কাচ রং করে বা অন্য উপায়ে পাকাপাকি ভাবে ঢেকে দিতে হবে। উঁচু গলায় কথা বলাও বারণ, যাতে অচেনা পুরুষ গলার আওয়াজ শুনতে না পায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস কাছারি থেকেও মেয়েদের সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ। আর এই সব কিছু মিলিয়েই শঙ্কিত সারা বিশ্ব। গত কুড়ি বছরে অল্প অল্প করে যেটুকু অধিকার অর্জন করেছিলেন মেয়েরা, তালিবান শাসনে তা জলাঞ্জলি দিতে হবে বলেই মনে করছেন সকলে। রাষ্ট্রসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গাটেরেস এক বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে তালিবান। আর এর মূল্য বেশি করে চোকাতে হবে মেয়ে ও শিশুদেরই। আফগান মেয়েদের কষ্টার্জিত অধিকার তাদের থেকে কেড়ে নেওয়ার ঘটনা মর্মান্তিক, এ কথাও বলেছেন তিনি।