মুসলিম জনসংখ্যা বাড়লেই মুসলিম ভোট বাড়বে। আর তাতেই বিজেপির ধ্বংসের আশা দেখেছিলেন যোগীরাজ্যের সপা বিধায়ক। অথচ দেখা যাচ্ছে, সেই যোগীরাজ্যেই দলে দলে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন মুসলিমরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
লোকসভা ভোটে যোগীরাজ্যের বিজেপি-ঝড়ে বড় ধাক্কা দিয়েছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। দলিত-মুসলিমদের ভোট যে সেই জয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই পরিস্থিতিতেই মুসলিম ভোটে আস্থা রেখে বিজেপির ধ্বংসের আশা দেখছেন অনেকে। সম্প্রতি যেমন এক জনসভায় যোগীরাজ্যের আমরোহার সপা বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মেহবুব আলি বলেন, মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিজেপির দিন শেষ, এবার ক্ষমতায় আসব আমরাই।
বিজেপির রাজনীতি যে বরাবর হিন্দুত্ব ঘেঁষেই চলে, এবং মুসলিমদের প্রতি নানাভাবে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়, এমন অভিযোগ প্রথম উঠছে না। গুজরাট হিংসা, বিলকিস বানো ধর্ষণ, কাঠুয়া ধর্ষণ থেকে নেতা-মন্ত্রীদের ঘৃণাভাষণ, বারবার তার আঁচ মিলেছে। লোকসভা ভোটের প্রচারে খোদ নরেন্দ্র মোদি মুসলিম আর মুঘল শব্দ টেনে এনেছেন বারবার। আমিষ খাওয়াকে মুঘল মানসিকতা বলে রাহুলকে তোপ দেগেছেন, যেখানে এ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ আমিষ আহারেই অভ্যস্ত। কোনও মুসলিম পুরুষ আর হিন্দু নারীর বিয়ে হলেই তাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে দাগিয়ে দেওয়া তো চলছেই। তাহলে, যেখানে মুসলিমদের ধর্ম, সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, সবকিছু নিয়েই শাসকের তরফে একের পর এক তোপ আসছে, সেখানে ওই মানুষদের বিপন্ন বোধ করা অস্বাভাবিক নয়। আর সেখান থেকেই বিজেপি-বিরোধী দলগুলির আশা, ভোটবাক্সে তার প্রতিফলন পড়বে। অর্থাৎ, বিজেপিবিরোধী দলের প্রতিই সমর্থন রাখবেন মুসলিমরা। সেখানে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়লে বাড়বে ভোটও।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কি তেমনটা ঘটছে? পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে, খোদ যোগীরাজ্যেও কিন্তু বিজেপি আর মুসলিমদের মধ্যে এমন স্পষ্ট দূরত্বের প্রাচীর আর টানা যাচ্ছে না এই মুহূর্তে। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি, আর ঠিক এক দশক পরে দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশ বিজেপিতে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা আগে যত ছিল, এখন তার দ্বিগুণ। আগে যে সংখ্যাটা ছিল ১.২৫ লক্ষ, এখন তা ২.৩৫ লক্ষ ছুঁয়ে ফেলেছে, অর্থাৎ প্রায় ৯০ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যেখানে বেশি হওয়ার কথা, সেখানেও এই হার কম নয়। যেমন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ৮১ হাজার ৬৭৭ জন মুসলিম বিজেপির সদস্য পদ নিয়েছেন। রাজনৈতিক মহল বলছে, বিজেপির প্রচার ও জনসংযোগ যেমন এর নেপথ্যে অনেকখানি দায়ী, তেমনই বিপন্নতা থেকেও যে অনেকে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছেন সে কথাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
২০২৭ সালেই উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে সপা, কংগ্রেসের মতো ইন্ডিয়া জোটের দলগুলি যে মুসলিম ভোটে বড় আস্থা রাখছিল, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সেই ভরসার দুর্গেই এবার বড় আঘাত হানল যোগীরাজ্যের বিজেপি শিবিরে মুসলিম সদস্যদের এই বৃদ্ধির গ্রাফ।