লম্বা একঢাল চুলের বদলে, মহিলাদের ছোট করে চুল কাটা মানেই তিনি নারীবাদী। আর নারীবাদীদের হেনস্তা করা নিয়ে কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না। এমন অদ্ভুত যুক্তিতেই মহিলার উপর আক্রমণ শানালেন জনৈক যুবক। ঘটনায় তোলপাড় গোটা বিশ্ব। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
প্রায় মাঝরাতে ঝাঁ চকচকে স্টোরে গিয়েছিলেন এক যুবক। সেই সময় কাউন্টার সামলানোর দায়িত্বে ছিলেন এক যুবতী। যুবকটি খেয়াল করেন, যুবতীর চুল ছোট করে ছাঁটা। আর তাতেই এতটা খেপে যান ওই যুবক যে, একেবারে মারমুখী হয়ে আক্রমণ শানান ওই যুবতীর উপর। বেপরোয়া ভাবে কিল-চড়-ঘুসি চালাতে থাকেন। মধ্যবয়সি এক মহিলা বাধা দিতে এলে তাঁকেও যারপরনাই হেনস্তার শিকার হতে হয়। শেষমেশ পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘটনায় ইতি পড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় যুবকটিকে।
আরও শুনুন: স্ত্রী থাকতেও অন্য নারীর সঙ্গে বাস! লিভ-ইন কি বলা যায়? জানাল হাই কোর্ট
কিন্তু ছোট চুল রাখার কারণে কেন যুবতীর উপর খেপে গেলেন যুবকটি? তাঁর দাবি, ছোট চুল রেখেছেন মানেই যুবতী নারীবাদী। নিজেকে ‘মেল শভিনিস্ট’ বলে উল্লেখ করে যুবকটি জানান, তাঁর মতে কোনও নারীবাদীকে অবমাননা করায় কোনও অন্যায় নেই। আর তাই তিনি মারমুখী হয়ে উঠেছিলেন। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, যুবকের হাতে মার খেয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন যুবতী। তাই এই মুহূর্তে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সম্ভব হচ্ছে না। যুবতী সুস্থ হয়ে উঠলেই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশ।
এরকম ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়েছে বিশ্বে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এ নিয়ে চর্চা চলছে। তবে, যুবকের এই আক্রমণের পিছনে সে-দেশের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবকেই দায়ী করছেন অনেকে। ‘নারীবাদী’ শব্দটিকেই দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতিতে বেশ ছোট চোখে দেখা হয়। ধরে নেওয়া হয়, নারীবাদী মানেই একজন মহিলা প্রবল পুরুষবিদ্বেষী হবেন। লিঙ্গসাম্যের নিরিখে সেই দেশের অবস্থান বহু পিছনে। ফলত যে সমাজ এবং মানসিকতা থেকে যুবকটি উঠে এসেছেন, সেখানে ছোট করে চুল কাটা মহিলাকে হেয় করাই যেন দস্তুর। ধরে নেওয়া হয়, মহিলাদের লম্বা চুলই থাকবে। ছোট করে চুল কাটা যেহেতু ব্যতিক্রম, তা কখনোই স্বাভাবিক বলে গ্রাহ্য হয় না। এই নিয়ে সে-দেশের নাগরিকদের মধ্যেও মতভেদ আছে। এক দল বলছেন, যুবকটিকে অকারণে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য দল এই মতের বিরোধিতা করেছে।
আরও শুনুন: তিন স্ত্রীকেই একরকম সুন্দর দেখাতে হবে, লাখ টাকা খরচ করে সার্জারির ব্যবস্থা স্বামীর
তবে সে দেশে এই ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সালে অলিম্পিকে সোনার পদক জেতা অ্যাথলিটকেও ছোট চুল রাখার কারণে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছিল। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে, এই ঘটনা যেন চোখে আঙুল দিয়েই তা প্রমাণ করল।