দাবি পূরণ না হলে ভোট বয়কট। চলতি নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে এই ছবি ধরা পড়ছে। কোথাও রাস্তা তৈরি কোথাও আবার অন্য কোনও দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক দিচ্ছেন আমজনতা। সেই তালিকায় রয়েছে বিয়ের দাবিও। ব্যাপারটা ঠিক কেমন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চাকরি নেই। তাই বিয়ে হয়নি। নির্বাচনের আবহে এই অভিযোগেই সরব হরিয়ানার যুবকরা। প্রতিবাদে ভোট বয়কটের হুশিয়ারিও দিয়েছেন তাঁরা। বিয়ে, চাকরির পাশাপাশি আরও কিছু দাবি রয়েছে তাঁদের। যা পূরণ করতে না পারলে লোকসভা নির্বাচনে কেউ অংশ নেবেন না বলেই দাবি তাঁদের।
আরও শুনুন: প্রধানমন্ত্রী হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়, ভোটের ‘অস্বস্তি’ কাটাতে চান মোদি?
মোদি জমানায় চাকরির আকাল, এই নিয়ে হামেশাই অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। পালটা পূর্বতন সরকারের গাফিলতির উদাহরণ টেনে আনেন বিজেপি নেতারা। সবমিলিয়ে ভোটের আবহে নেতাদের কথায় চাকরি নিয়ে তরজা চলতেই থাকে। কিন্তু সাধারণ জনগণ তাতে ঠিক কতটা লাভবান হন, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সম্প্রতি এই ইস্যুকে সামনে রেখেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন হরিয়ানার যুবকরা। সরকারের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করার ক্ষমতা তাঁদের নেই বললেই চলে। তাই সে রাজ্যের অধিকাংশ অবিবাহিত যুবক ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আসলে, চাকরি না পাওয়ায় তাঁদের জীবন একেবারে অন্য পথে চালিত হয়েছে। বিয়ে হয়নি বেশিরভাগের। সেই নিয়ে সমাজিক কটাক্ষ সহ্য করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। দাবি উঠছে পেনশনের। সে অবশ্য সরকারি প্রতিশ্রুতি মেনেই। আসলে, হরিয়ানায় গত বছর থেকেই নতুন পেনশন স্কিমের কথা ঘোষণা করা হয়। সেখানে বলা হয়, যেসব অবিবাহিতদের বার্ষিক রোজগার ১.৮ লাখের কম, তাঁরা সকলেই পেনশন পাবেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা ছিল নির্দিষ্ট বয়সও। কিন্তু বাস্তবে সেই বয়সের গণ্ডি পেরিয়েও পেনশনের সুবিধা মিলছে না বলেই অভিযোগ হরিয়ানার একাধিক বাসিন্দার। তাই সামগ্রিক ভাবে পেনশন, চাকরি এবং অবশ্যই বিয়ের দাবিতে প্রতিবাদে নেমেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: দুয়ারে ভোট! দাবি আদায়ে ‘নির্বাচন বয়কট’ ব্রহ্মাস্ত্র জনতার
যদিও এই নির্বাচনই প্রথম নয়। এর আগে ১৪-র নির্বাচনেও একইভাবে বিয়ের দাবি তুলেছিলেন হরিয়ানার অবিবাহিত যুবকরা। ভোটের বদলে বউ খুঁজে দেওয়ার আবদার জানিয়েছেন তাঁরা। তবে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বাধ্য হয়ে অনেকে চলে গিয়েছেন অন্য রাজ্যে। কেউ বা চাকরির খোঁজে পাড়ি দিয়েছেন ভিনদেশে। কিন্তু যারা রয়ে গিয়েছেন তাঁদের জীবন একপ্রকার দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে দিনে দিনে। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, রাজ্যের লিঙ্গ অনুপাতে মারাত্মক বৈষম্যতার কারণেই বউ-এর আকাল। পরিসংখ্যান বলছে, সে রাজ্যে প্রতি হাজার জন পুরুষ থাকলে মহিলার সংখ্যা ৯১৪। সঙ্গে দোসর বেকারত্ব। কেউ বিয়ে করতে চাইলেও, চাকুরিজীবীদেরই বাছছেন। বিগত কয়েক বছরে হরিয়ানার অবিবাহিত যুবকদের নিয়ে দুটি সংগঠনও তৈরি হয়েছে। সেখানে একাধিক দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। হিসাব বলছে, এই মুহূর্তে দুই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা লক্ষাধিক। একটি সংগঠন অবশ্য স্ত্রী মারা গিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের নিয়ে। প্রত্যেকেরই বয়স ৪৫-৬০ এর মধ্যে। এঁরাই মূলত পেনশনের দাবিদার। তার সঙ্গে অবিবাহিতরাও রয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, ভোটের আগে এই দাবি তোলার একমাত্র কারণ সকলের নজরে আসা। নিজেদের সমস্যার কথা সবাইকে জানাতে পারলেই লাভ হতে পারে বলে মনে করছেন হরিয়ানার অবিবাহিত পুরুষরা। তবে বাস্তবে তা আদৌ সম্ভব হয় কি না সেটাই দেখার।