দেশদ্রোহ আইনের প্রয়োজনীয়তা কি এখনও আছে? ঔপনবেশিক এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। সেখানেই সরকারের তরফে জবাব দিতে আরও সময় চাইলেন সলিসিটর জেনারেল। আর তাতে বেজায় ক্ষুব্ধ আবেদনকারীদের অন্যতম তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। অবশ্য, সরকার যে এই আইন পুরোপুরি বাতিলের পক্ষে নয়, সে কথা আদালতকে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে মামলাটি? আসুন শুনে নিই।
ঔপনিবেশিক দেশদ্রোহ আইন আজকের ভারতবর্ষেও প্রযোজ্য কি-না, সে প্রশ্ন বারবার উঠেছে। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চলছে একাধিক মামলা। এই সংক্রান্ত মামলার শুনানিতেই বৃহস্পতিবার জবাব দেওয়ার জন্য আরও খানিকটা সময় চেয়ে নিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। যা নিয়ে যারপরনাই ক্ষুব্ধ অন্যতম আবেদনকারী মহুয়া মৈত্র।
আরও শুনুন: বাড়ল রেপো রেট, ফিক্সড ডিপোজিট করা ও লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন কী কী করণীয়?
প্রধান বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চে এদিন ওঠে মামলাটি। আদালতকে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪(এ) ধারা মোতাবেক দেশদ্রোহিতা সংক্রান্ত আইনটি থাকুক, কিন্তু যদি আইনের অপব্যবহার হয় তা নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা দিতে পারে শীর্ষ আদালত। সাম্প্রতিক হনুমান চালিশা বিতর্কে এই আইন প্রয়োগের অপব্যবহার হয়েছে বলেই মনে করেন তিনি। এদিকে এই সংক্রান্ত মামলায় জবাব দিতেই আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে আদালতকে জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। এদিকে, আবেদনকারীদের একজনের পক্ষ আইনজীবী কপিল সিব্বাল জানান, এই আইন সাংবিধানিক ভাবে বৈধ নয়। ইতিমধ্যেই সে সিদ্ধান্ত নিতে ৬০ বছর দেরি হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ শুনানি পিছনোয় তিনি যে সন্তুষ্ট নন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আদালত সরকার পক্ষকে সাফ জানিয়েছে, আগামী সোমবারের মধ্যে যেন জবাব তৈরি করে ফেলে কেন্দ্র। মঙ্গলবার ১০ মে মামলার পরবর্তী শুনানি। মামলাটি পাঁচ বা সাত বিচারপতির বেঞ্চে হস্তান্তরিত করা হবে কি-না, তাও ঠিক করবে আদালত।
এদিকে জবাব দিতে কেন্দ্রের আবার সময় চাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ মহুয়া মৈত্র। মামলার গুরুত্ব মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বারবার সময় চাওয়ার জন্য একহাত নিয়েছেন সলিসিটর জেনারেলকে। তিনি যেভাবে বারবার শুনানি রদ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা লজ্জাজনক বলেই টুইট করে জানিয়েছেন মহুয়া।
আরও শুনুন: বোনকে কোলে নিয়েই স্কুলে, খুদের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে শিক্ষার ভার নিলেন মন্ত্রী
এর আগেও এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে , যেভাবে দেশদ্রোহী আইন প্রয়োগ করে একের পর এক গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়ছিল, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল শীর্ষ আদালত। জানতে চেয়েছিল, যে আইন এককালে মহাত্মা গান্ধীর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কণ্ঠরোধের জন্য প্রয়োগ করা হত, তা কেন্দ্র রদ করছে না কেন? পরবর্তীতে এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেই একাধিক মামলা রুজু হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে আছে এডিটর্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়া-ও। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও মামলায় একজন পৃথক আবেদনকারী। সেই মামলারই প্রেক্ষিতেই সরকারের দাবি, আইন থাকুক। তবে যেহেতু শীর্ষ আদালত এর অপব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল, তাই বরং অপব্যবহার রোখার নির্দেশিকা আনুক শীর্ষ আদালত। আপাতত ১০ মে পরবর্তী শুনানিতে বোঝা যাবে কোন পথে চলেছে এই মামলা। অর্থাৎ আদৌ এই সাংবিধানিক ভাবে বৈধ কি-না, তা স্থির হবে পরবর্তী শুনানির ভিত্তিতেই।