পৃথিবীর খাদ্যসমস্যা দূর করার সমাধান এবার হাতের মুঠোয়, জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সৌজন্যে, মানুষের মূত্র। যে জিনিস মানুষকে নাকে হাত চাপা দিতে বাধ্য করে, তাই নাকি কমিয়ে দেবে মানুষের অন্নকষ্ট? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
আচ্ছা, গবেষণা করার কি আর জিনিস মিলবে না যে শেষমেশ এই বস্তু নিয়েও টানাটানি! বিজ্ঞানীদের কি ঘেন্নাপিত্তিও নেই, বলুন তো? পাবলিক টয়লেটের কাছাকাছি গেলেই অ্যামোনিয়ার উগ্র ঝাঁঝালো গন্ধে দম আটকে আসে। আর সেই মানুষের মূত্র নিয়েই কিনা ল্যাবরেটরির টেবিলে কাজকর্ম! এমন কথা কেউ কখনও শুনেছে? দাঁড়ান, ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি।
আরও শুনুন: বিমান থেকে মানুষের মল এসে পড়ল মাথায়, নিজের বাগানেই নাস্তানাবুদ হলেন এক ব্যক্তি
পৃথিবী নামক গ্রহটিতে যবে থেকে মানুষ ঘরগেরস্থালি পেতে বসেছে, তখন থেকেই তাকে খাবারদাবারের কথা চিন্তা করতে হয়েছে। এদিকে তার সংসারে যত লোক বেড়েছে, খাবারের জোগানে ততই টানাটানি দেখা দিয়েছে। আমরা তো জানিই, আধুনিক পৃথিবীর প্রধান সমস্যাগুলির মধ্যে একটা বড়সড় সমস্যা, প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্যের সংস্থান। এই অভাব কীভাবে মেটানো যায়, তা নিয়ে কবে থেকেই বিজ্ঞানীরা মাথা ঘামিয়ে চলেছেন। আর এবার এ ব্যাপারে একটা সমাধানসূত্র মিলেছে বলেই মনে করছেন সুইডিশ ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্স-এর একদল বিজ্ঞানী।
ঠিক কী উপায় পেয়েছেন তাঁরা?
আরও শুনুন: কয়লার বদলে মানুষের মল ব্যবহার হবে জ্বালানির কাজে, দাবি বিজ্ঞানীদের
তাঁরা মনে করছেন, মানুষের মূত্র থেকেই চিরস্থায়ী সমাধান ঘটতে পারে এই সমস্যার। যতই নাক সিঁটকান, এই বস্তুটিতে কিন্তু পুষ্টিগুণের কমতি নেই। কিন্তু সেই পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ উপাদানগুলি মানুষের কাজে লাগার বদলে ড্রেন দিয়ে গড়িয়ে যায় কোনও জলাশয়ে, এবং জলে মেশে। এর ফলে দূষণ বাড়ে জলেও। এই জলদূষণ ঘটানোর কৃতিত্বে সেরা চিন, তারপরেই ভারত, এবং তারপরে যুক্তরাষ্ট্র। আর তাই মানুষের বর্জ্যটিকেই ফের ব্যবহার করার অবস্থায় নিয়ে আসতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে গোটা পৃথিবীতে যে পরিমাণ নাইট্রোজেন ও ফসফরাসযুক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়, তা এক-চতুর্থাংশ কমে যেতে পারে, যদি সার হিসেবে মূত্র ব্যবহার করা যায়। জানাচ্ছেন ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং এই বিজ্ঞানী দলের অন্যতম পৃথ্বী সিমহা। মূত্র সংগ্রহ করে তা সার হিসেবে কৃষিজমিতে ব্যবহার করা ছাড়াও পানীয় জল বাঁচানো সম্ভব হবে এর ফলে, এমনটাই মত বিজ্ঞানীদের। সুইডেনের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গটল্যান্ডের ওয়াটারলেস ইউরিনালগুলি থেকে ৩ বছরে ৭০ হাজার লিটার মূত্র সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তার জলীয় অংশ শুকিয়ে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের মতো একাধিক খণ্ড, শেষমেশ যেগুলিকে পাউডারের মতো গুঁড়ো করা হয়েছে। আর এ থেকেই কৃষিজমিতে ব্যবহার করার উপযোগী সার উৎপন্ন করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। কৃষিকাজে যেসব আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, সেগুলিও এই সার কাজে লাগাতে সক্ষম। বিজ্ঞানীদের দাবি সঠিক হলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার যেমন কমবে, তেমনই কমবে জলদূষণের হারও। পাশাপাশি শস্য উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লে পৃথিবীজোড়া খাদ্যসমস্যাও কমে যেতে পারে বেশ খানিকটা। সেই লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।