এক কথায় ‘তালাক’ শব্দ উচ্চারণ করে বিয়ে ভাঙা আর আইনসিদ্ধ নয়। কারণ তিন তালাক প্রথা রদ করেছে মোদি সরকার। আর সেইজন্যেই ‘স্থায়ী স্বামী’ পাচ্ছেন মুসলিম মহিলারা। সম্প্রতি এমনই মন্তব্য করে বসলেন আর.এস.এস-এর এক নেতা। তাঁর এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করেই বিতর্ক উসকে উঠেছে কর্নাটকে। শুনে নেওয়া যাক।
মোদি জমানায় বন্ধ হয়েছে তিন তালাক প্রথা। এই নিয়ে মুসলিমদের কটাক্ষ করে হামেশাই মন্তব্য করতে শোনা যায় হিন্দুত্ববাদী নেতাদের। সম্প্রতি এই ইস্যুতেই এক আর.এস.এস নেতার সাফ মন্তব্য, মোদি সরকারের জন্যই মুসলিম মহিলারা ‘স্থায়ী স্বামী’ পাচ্ছেন। কর্নাটকের হিন্দুত্ববাদী নেতা প্রভাকর ভাটের এহেন মন্তব্যের জেরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে ইতিমধ্যেই।
আরও শুনুন: ‘চমৎকার বক্তৃতা দেন, ভোটে লড়বেন?’ প্রশংসা খোদ প্রধানমন্ত্রীর, কে এই মহিলা?
মোদি আমলে যে মুসলিম মহিলারা বেশি সুরক্ষিত, সেই দাবির সপক্ষে বারে বারেই তিন তালাক রদের প্রসঙ্গ টানে বিজেপি। ২০১৯ সালে মুসলিম মেয়েদের জন্য মুসলিম নারী আইন পাশ করে মোদি সরকার। মুসলিম মহিলাদের বিয়ের পরবর্তী সময়ে নিজের অধিকার রক্ষা করার দিকটি সুনিশ্চিত করে এই নয়া আইন। সেখানেই তিন তালাক দেওয়ার প্রথাকে আইনত দণ্ডনীয় বলে ঘোষণা করা হয়। মুসলিম সমাজে প্রচলিত এই তিন তালাক প্রথার দরুন কোনও পুরুষ যে কোনও সময় তিনবার তালাক বলে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারতেন। তবে মোদি জমানায় তৈরি এই নতুন আইন মোতাবেক, স্ত্রীকে তিন তালাকে বিবাহবিচ্ছেদ দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এই অপরাধে অভিযুক্ত স্বামীকে তিন বছর পর্যন্ত হাজতবাস করতে হতে পারে। তবু বিভিন্ন জায়গায় এখনও তিন তালাক দেওয়ার ঘটনা শোনা যায়। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ে না দেশের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। সম্প্রতি এমনই এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিন তালাক প্রসঙ্গ তোলেন আরএসএস নেতা প্রভাকর ভাট। তাঁর কথায়, এই নয়া আইনের জন্য মুসলিম পুরুষরা মোদি সরকারের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ। উলটোদিকে একই কারণে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ মুসলিম মহিলারা। নিজের বক্তব্যের সাফাই দিতে গিয়ে প্রভাকর আরও বলেন, আগে মুসলিম মহিলাদের কোনও স্থায়ী স্বামী ছিল না। তিন তালাক রদ হওয়ার পর থেকেই তাঁরা স্থায়ী স্বামী পাচ্ছেন। শুধু মুসলিম মহিলাদের নিয়ে মন্তব্যই নয়, নিজের বক্তব্যে লাভ জিহাদের প্রসঙ্গও টানেন প্রভাকর। তাঁর দাবি, হিন্দুদের ধর্মান্তর করার জন্য কেবল মুসলিম পুরুষেরাই নয়, মুসলিম মহিলারাও সমানভাবে তৎপর। লাভ জিহাদ, অর্থাৎ ভিন ধর্মের পুরুষকে প্রেমের জালে জড়িয়ে প্রতারণা করতে তারাও কম যায় না, এমনই অভিযোগ ওই হিন্দুত্ববাদী নেতার।
আরও শুনুন: আইন আছে, হেলদোল নেই! যোগীরাজ্যে বিয়ের দু’ঘণ্টা পরেই স্ত্রীকে তিন তালাক ব্যক্তির
নেতার ওই বক্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় বিতর্ক। তাঁর ‘স্থায়ী স্বামী’ সংক্রান্ত মন্তব্যটি একেবারেই ভালোভাবে নেয়নি দেশের একাধিক নারী সংগঠন। নেটদুনিয়ায় অনেকেই এর বিরুদ্ধে সরব হন। ইতিমধ্যেই নাজিয়া নাজির নামে এক সমাজকর্মী হিন্দু নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, হিন্দু নেতার ওই মন্তব্য মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করছে। সুতরাং এর জেরে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, এই ধরনের মন্তব্য মহিলাদের জন্যও যথেষ্ট অপমানজনক। জানা গিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ওই নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রুজু করেছে পুলিশ। এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার।