ভগবান রামের জন্মস্থান ঘিরে রয়েছে হাজারো বিতর্ক। তবে শুধু রাম নন। তাঁর পরম ভক্ত হনুমানের জন্ম কোথায়, তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। তাও আবার একটা জায়গা নয়। একাধিক রাজ্য থেকে দাবি করা হয় হনুমানের জন্মস্থান সেখানেই। বিতর্কের জল গড়ায় আদালত অবধি। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় শেষমেশ? আসুন শুনে নিই।
অন্ধ্রপ্রদেশ না কর্ণাটক- রামভক্ত হনুমানের আসল জন্মস্থান কোথায়? দুই রাজ্যের মধ্যে এই নিয়ে চরম বিবাদ ঘনিয়েছিল। ঘটনার জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। এরই মাঝে আরও তিন রাজ্য দাবি করে, হনুমানের জন্ম সেখানে। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতের হস্তক্ষেপে সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হয়।
আরও শুনুন: তাজমহল, কুতুবমিনার ভেঙে হোক বিশ্বসেরা মন্দির, খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছেই আরজি বিজেপি বিধায়কের
আসলে, পুরাণমতে হনুমানের জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে কিষ্কিন্ধায়। এই রাজ্যের অধিপতি ছিলেন বানররাজ সুগ্রীব। রামায়ণ অনুসারে, শ্রীরামের লঙ্কা বিজয়ে সাহায্য করেছিল এই সুগ্রীবের বিশাল বানর সেনা। আবার সুগ্রীবের সঙ্গে রামের সাক্ষাত হয়েছিল হনুমানের সৌজন্যেই। সব মিলিয়ে রামায়ণে একাধিকবার কিষ্কিন্ধার উল্লেখ মেলে। তবে প্রভু হনুমান ঠিক কোথায় জন্মেছিলেন সেই নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন কিষ্কিন্ধার নিকটবর্তী আঞ্জনেয় পর্বতে হনুমানের জন্ম হয়েছিল। আবার অনেকের মতে হনুমান জন্মেছিলেন তিরুপতির অঞ্জনাদ্রি পর্বতে। এই দুই জায়গা বর্তমানে কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের অন্তর্গত। তাই হনুমানের জন্ম কোথায় তা নিয়ে দুই রাজ্যের মধ্যেই রয়েছে বেশ দড়ি-টানাটানি। বানররাজ সুগ্রীবের কিষ্কিন্ধা বর্তমানে কর্ণাটকে অবস্থিত। তাই এখানকার আঞ্জনেয় পর্বতকেই হনুমানের জন্মস্থান হিসেবে মনে করেন অনেকে। কিন্তু তিরুপতিবাসীর দাবি হনুমান জন্মেছিলেন অন্ধপ্রদেশের তিরুমালার নিকটবর্তী অঞ্জনাদ্রি পর্বতে। দুই রাজ্যের তরফেই এই নিয়ে আদালতে মামলা হয়। এই আবহে মহারাষ্ট্র, গুজরাট, ও ঝাড়খণ্ডের তরফে দাবি করা হয় হনুমানের জন্ম সেই সব রাজ্যে। আসলে হনুমান জননী অঞ্জনীর নামে এই তিন রাজ্যেও তিনটি পাহড় রয়েছে। তিনটি জায়গাতেই রয়েছে হনুমান মন্দির। তাই সেই মন্দিরগুলিকেই হনুমানের আসল জন্মস্থান হিসেবে দাবি করেন তাঁরা। একইসঙ্গে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন হনুমান জন্মস্থান নিয়ে নিজেদের মতামত পেশ করতে থাকে।
আরও শুনুন: অস্ত্র হাতে ধর্মীয় মিছিল কি বন্ধ করা যায়! এমন আবেদন পেয়ে কী জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট?
সমস্ত বিতর্কের আংশিক সমাধান হয় হালে। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণে নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গেই হনুমানের জন্মস্থান বিতর্কে রায়দান করে আদালত। সংখ্যাগরিষ্ঠের দাবি মেনে কর্ণাটকের আঞ্জনেয় পর্বতকেই হনুমানের প্রকৃত জন্মস্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেখানে তৈরি করা হয় হনুমানের মন্দির। একইসঙ্গে বিশালাকায় হনুমান মূর্তিও স্থাপন করা হয়। তবে অন্যান্য রাজ্যগুলিকেও হনুমান মন্দির নির্মাণে বাধা দেয়নি আদালত। অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড কিংবা গুজরাটেও তৈরি হয় হনুমান মন্দির। বেশ কিছু জায়গায় হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে মেলাও বসে। সমস্ত বিতর্ক সরিয়ে রেখে সারা বছরই পবনপুত্র হনুমানের পুজো দিতে এইসব মন্দিরে হাজির হন সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন।