বাবা ছিলেন মদ্যপ। সংসারে ছিল দারিদ্র্যের প্রখর থাবা। হয়তো হারিয়েই যেতেন। অল্প বয়সে বিয়ের পর ঘরসংসার করেই কেটে যেত বাকি জীবন। কিন্তু তিনি ব্যতিক্রমী। আর তাই শুধু নিজের জীবনের মোড় ঘুরিয়েছেন তাই-ই নয়, অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরাচ্ছেন অন্য কিশোরীদেরও। আসুন শুনে নিই তাঁর গল্প।
গল্প নয়, এ আসলে সত্যি। জীবন যেন এমন একখানা গল্প আমাদের বলে, যা লেখা যায় না। হয়তো বিশ্বাসও করা যায় না চট করে। ঠিক যেরকম অবাক করে দেয় রাজস্থানের প্রবীণার গল্প। নাম প্রবীণা হলেও, তিনি নবীনা; বয়স মাত্র ১৯। তবে এই বয়সে তাঁর কৃতিত্ব কিন্তু কম নয়। ভোটে লড়ে হয়েছেন ‘সরপঞ্চ’। তবে, তাঁর জীবনের আজকের এই কৃতিত্বের কথাটুকু বুঝতে গেলে ফিরতে হবে অতীতে।
আরও শুনুন: ভূতুড়ে কাণ্ড! এমনিই চুল বাড়ে খেলনা পুতুলের, পুজোও করেন স্থানীয়রা, কোথায় জানেন?
একটা সময় ছিল, যখন প্রবীণার জীবনে আশার আলোটুকুও সেভাবে ছিল না। বাবা ছিলেন মদ্যপ। সংসারে দারিদ্রের খরতাপ। হয়তো অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যেত। টাকার জন্য এটা ওটা করে, কিংবা পশুপালন করেই জীবন কাটত। প্রবীণা বলছেন, জীবন যে পথে চলছিল তাতে এর বেশি যেন কিছু হওয়ারই ছিল না। তবু জীবন আশ্চর্য বলেই তার পরতে পরতে মিশে থাকে চমক। প্রবীণার জীবনের মোড়ও একদিন ঘুরে গিয়েছিল, আকস্মিক। তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীর। প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা যাতে শিক্ষার আলো পান, তা নিশ্চিত করাই ছিল তাঁর কাজ। একদিন তিনি খুঁজে পান প্রবীণাকে। পাঠিয়ে দেন একটি স্কুলে। তাও সে স্কুল ছিল প্রবীণার বাড়ি থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। একবার দারিদ্রের কারণেই স্কুলছুট হতে হয়েছিল প্রবীণাকে। এই সুযোগ আর তাই হাতছাড়া করেননি তিনি। স্কুলে গিয়ে প্রথমে শেষ করেন পড়াশোনা, তারপর বিয়ে। শেষমেশ ভোটে লড়াই করে নির্বাচিত হন ‘সরপঞ্চ’ হিসাবে।
আরও শুনুন: খারাপ হলেই শীতে স্নানের দফারফা! ছোট্ট কৌশলেই ঠিক থাকবে গিজার, কী করণীয়?
নিজের সাফল্যেই অবশ্য আটকে থাকেননি প্রবীণা। নানা গ্রাম দেখভালের দায়িত্ব যখন হাতে এল, তখন তিনিও খোঁজ করলেন সেইসব মেয়েদের, যাঁরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। নিজের জীবনে যে দুর্যোগ নেমে এসেছিল, তা যেন আর কারও জীবনে না নামে, সেটাই নিশ্চিত করতে চান তিনি। একদিন তিনি যে আশার আলো দেখতে পাননি, সেই আশার আলোই তিনি ছড়িয়ে দিতে চান বাকিদের মধ্যে। তাঁর এই কাজে খুশি শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও। মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ভাবনা তাঁদের পরিবারেও ছিল না। তবে, সেই মানসিকতা বদলে দিয়েছেন প্রবীণা। বদলে দিয়েছেন সামগ্রিক গ্রামেরই মন। এখন তাই বহু মেয়েই স্কুলে যাচ্ছে, শিক্ষা পেয়ে গড়ে নিতে পারছে নিজেদের জীবন। আর তাদের সকলের কাছে প্রেরণা হয়ে উঠেছেন ১৯ বছরের প্রবীণা।