চুমু বোধহয় ভালবাসার সবচেয়ে সহজ প্রকাশ। কিন্তু সেই চুমুর জেরেই এবার নয়া বিতর্কে জড়ালেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। সংসদে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে নারীদের অবমাননা করেছেন তিনি, এই অভিযোগেই সরব বিজেপি। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
খেলার মাঠ হোক কি সিনে পার্টি, উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিতে দেখা যায় অনেককেই। তবে সংসদের গুরুগম্ভীর পরিবেশে এমন কাজ? হ্যাঁ, রাহুল গান্ধী নাকি এবার তেমনটাই করে বসেছেন। আর তা নিয়েই বেজায় উত্তেজিত বিজেপি। এর আগেও সংসদে বসেই কখনও এক চোখ টেপা, কখনও আবার প্রধানমন্ত্রী মোদিকে জড়িয়ে ধরা, এমন অভিনব আচরণ করেছেন রাহুল। তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। কেউ কেউ বলে থাকেন, এই ধরনের কাজের দরুন তাঁর রাজনৈতিক সত্তাই যেন খাটো হয়ে যাচ্ছে।
আরও শুনুন: ‘ইন্ডিয়া’ নয় ‘ভারত’! রব তুলেছিল বিজেপি, সংসদে ফিরে কৌশলী রাহুলের মুখে শুধুই ভারত
কিন্তু যে রাহুলকে রাজনৈতিক মহল এখন আরও পরিণত বলে মনে করছে, তিনিই নাকি সংসদে ট্রেজারি বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিয়েছেন। খোদ স্পিকারের কাছে এই অভিযোগ জানিয়েছেন স্মৃতি ইরানি সহ বিজেপির সাংসদদের। এই আচরণে বেঞ্চে উপস্থিত মহিলাদের অসম্মান করা হয়েছে বলে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। মোদি পদবি বিতর্কে আপাতত রেহাই পেয়ে সবে সংসদে ফিরেছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। তারপরেই ফের তাঁর প্রতি এই অভিযোগ শানিয়ে রাহুলকে নারীবিদ্বেষী বলে কটাক্ষ করছে বিজেপি। আর এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি এই আচরণকে নারীদের প্রতি অসম্মান হিসেবেই দেখা উচিত? নাকি রাহুলের কাছে এই অভিব্যক্তি আসলে ভালবাসারই প্রকাশ?
আরও শুনুন: ‘৮২ শতাংশ হিন্দুর দেশ তো হিন্দুরাষ্ট্রই!’ ছেলেকে বাঁচাতে সওয়াল খোদ কংগ্রেস নেতার
এমনিতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকেই উড়ন্ত চুমুর বিষয়টি এসেছে। যা চুমুর মতো, কিন্তু সেখানে একজনের ঠোঁট অপরজনের অঙ্গ স্পর্শ করে না। যদিও অনেকসময় রাস্তাঘাটে দেখা যায়, কোনও মহিলাকে কুৎসিত ইঙ্গিত করার উদ্দেশ্যেই এই ভঙ্গিটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তবে তা কিন্তু আসল কথা নয়। উড়ন্ত চুমু আসলে ভালবাসা-স্নেহ-আদরেরই প্রকাশ। যে কোনও অভিজাত পার্টিতে এইভাবে সম্ভাষণ জানানো যেমন স্বাভাবিক, তেমনই কোনও তারকা অভিনেতাদের দিকে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন, এমনটাও হামেশাই দেখা যায়। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক নেতা উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিচ্ছেন? নাহ, গোটা বিশ্বের রাজনীতির দিকে তাকালেও দেখা যাবে, ট্রাম্প ছাড়া আর কাউকে কিন্তু তেমন করতে দেখা যায়নি। বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার নাম অবশ্য একবার ‘এয়ার কিস’ বিতর্কে জড়িয়েছিল, কিন্তু পরে বোঝা যায়, নেহাত ক্যামেরা অ্যাঙ্গলের দৌলতেই এই বিভ্রান্তি ছড়ায়।
আরও শুনুন: প্রত্যাবর্তনে জনপ্রিয় রাহুল, তবে ফের তাঁকে টেক্কা দিলেন মোদিই
তবে রাহুলের ক্ষেত্রে কিন্তু তা বলা যাবে না। যদিও বিজেপির নয়া দাবি নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলেনি কংগ্রেস। কিন্তু এর আগেও রাহুলকে রাজনৈতিক সমাবেশেই উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিতে দেখা গিয়েছে। ভারত জোড়ো যাত্রা যখন মধ্যপ্রদেশে, সেই সময় একদিন যাত্রার আশপাশ থেকে মোদির নামে স্লোগান দিতে শুরু করে একদল জনতা। তাতে উত্তেজিত না হয়ে ওই ভিড়ের দিকে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। যেন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ঘৃণার রাজনীতির বিপক্ষে ভালবাসাই তাঁর অস্ত্র।
সেই পুরনো ঘটনাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, সংসদে রাহুল যে নারীদের অসম্মান করতে এ কাজ করেছেন তা কিন্তু নয়। বরং এ তাঁর সহজাত এক ভঙ্গি, যেখানে অসম্মানের বদলে ভালবাসারই প্রকাশ। তবে সেই অভিব্যক্তি অসংসদীয় কি-না, তা তো একমাত্র সংসদই বলতে পারে। অতএব এ ব্যাপারে স্পিকারের পদক্ষেপ ছাড়া আপাতত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাচ্ছে না। ‘ফ্লাইং কিস’ অসম্মান নাকি ভালবাসা, সংসদীয় গণতন্ত্রে তা নির্ধারণের ভার আপাতত স্পিকারের উপরই বর্তাল।