ভারত-জোড়ো-যাত্রার প্রাথমিক পর্ব শেষে কি হারিয়ে গেলেন রাহুল গান্ধী? রাজনৈতিক মহলে ইতিউতি প্রশ্ন উঠছিল। আর ঠিক সেই সময়ই দেশের অবস্থা নিয়ে আরও একবার মুখ খুললেন তিনি। তা-ও একেবারে ভিনদেশি সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। কী কী বললেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
ভারত-জোড়ো-যাত্রা যে নিছক দলকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়, তা প্রমাণে মরিয়া ছিলেন রাহুল গান্ধী। এই যাত্রাকে সর্বজনীন করে তোলাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। হতে পারে, কংগ্রেসই যাত্রার আয়োজক, কিন্তু শুধুমাত্র কেন্দ্রের বিরোধিতার খাতিরেই যাত্রা, এই ধারণাটি প্রাণপণে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। আর তাই টেনে এনেছিলেন ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার কথা। সংঘের বিরুদ্ধে আদর্শগত বিরুদ্ধতার কথাই বলে চলেছিলেন তিনি। সেই কথাই ফের শোনা গেল তাঁর মুখে। ইটালির এক সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, রাহুল সাফ জানালেন, দেশে যে ফ্যাসিজম চলছে, এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।
আরও শুনুন: লতা মঙ্গেশকরকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, সৌজন্যের প্রশ্নে পাকিস্তানকে তুলোধোনা জাভেদ আখতারের
এই সাক্ষাৎকারে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বেশ ভাল ভাবেই মুখ খুলেছেন রাহুল। সম্প্রদায়গত বিভাজন কি ভারতকে কবজা করে ফেলেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে রাহুল জানিয়েছেন, হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের বিভাজন আছে, এ কথা অনস্বীকার্য। তবে তাঁর অভিযোগ সংবাদমাধ্যমের প্রতিও। তাঁর মতে, দেশের মূল সমস্যাগুলির দিকে তেমন করে নজর দেওয়া হচ্ছে না। দারিদ্র, অশিক্ষা, বেকারত্ব, মহামারীর পরে সাধারণ মানুষের – বিশেষত, দেনাগ্রস্ত ছোট ব্যবসায়ী এবং কৃষকদের যা অবস্থা, সেগুলি আরও বেশি করে বলা প্রয়োজন ছিল বলেই মনে করেন তিনি। আর এই সূত্রেই তিনি জানিয়ে দেন, দেশে ফ্যাসিজম ইতিমধ্যেই থাবা বসিয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিসরগুলি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে তিনি সংসদে ঠিক করে কথা বলতে পারেন না। কথা বলতে গেলেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশের সংসদ যে ক্রমশ অকেজো হয়ে পড়ছে, এমনটাই আক্ষেপ রাহুলের। দেশের এই নতুন পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলতে থাকেন যে, দেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীনতা হারাচ্ছে, ক্ষমতা ক্রমশ কেন্দ্রীভূত হয়ে ভারসাম্য হারাচ্ছে, এমনকী সংবাদমাধ্যমও হারিয়েছে তার স্বাধীনতা। আর তাই দেশে যে ইতিমধ্যেই ফ্যাসিজমের ছায়া গাঢ় হয়েছে, এ কথা বলতে দ্বিধা করেননি তিনি।
আরও শুনুন: ‘সাহসী’ কাজ করেছে রুশদির হামলাকারী, জমি উপহার দেওয়ার ঘোষণা ইরানি সংগঠনের
গণতান্ত্রিক এই সংকটের বিরুদ্ধেই ছিল রাহুলের ভারত-জোড়ো-যাত্রা, যাকে তিনি তপস্যা বলতেই পছন্দ করেন। দেশের মাটিতেও সে-কথা বলেছেন, বলেছেন বিদেশের সংবাদপত্রেও। দেশের গণতন্ত্রের সংকট তুলে ধরাই যে তাঁর লক্ষ্য, এই সাক্ষাৎকারে তাই-ই স্পষ্ট হচ্ছে। তবে বিদেশের কাগজে এই সাক্ষাৎকার দেওয়ার দরুন তাঁকে যে সমালোচনার মুখেও পড়তে হবে, সে আশঙ্কা অবশ্য থেকেই যাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।