মন্দির-মসজিদ বিতর্কের আবহাওয়ায় নয়া সংযোজন কুতুব মিনার ইস্যু। কুতুবউদ্দিন আইবকের বিজয়স্তম্ভ হিসাবেই খ্যাত এই স্থাপত্যটি। কিন্তু আদতে এখানে ছিল হিন্দু ও জৈন মন্দির, সম্প্রতি এমন দাবিতে মামলা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে এবার ASI-এর প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো একটি রিপোর্ট থেকে মিলল নতুন তথ্য। কী জানা গিয়েছে সেখানে? শুনে নেওয়া যাক সে কথা।
হিন্দু মন্দিরের জায়গাতেই গড়ে উঠেছিল কুতুব মিনার চত্বরের মসজিদ। সম্প্রতি এই তথ্যই জানা গেল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট থেকে, যে রিপোর্টটি তৈরি হয়েছিল প্রায় দেড়শো বছর আগে। ১৮৭১-৭২ সালের এই রিপোর্টে থাকা তথ্যগুলিকে সম্পূর্ণ সঠিক বলেই দাবি করেছেন এএসআই-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর ডঃ অমরেন্দ্র নাথ। সেক্ষেত্রে কুতুব মিনার বিতর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে এই তথ্য।
আরও শুনুন: হিন্দু রাজার জমিতেই গড়ে উঠেছিল তাজমহল, কীসের বিনিময়ে পেয়েছিলেন শাহজাহান?
তাজমহল কিংবা কুতুব মিনারের মতো প্রাচীন ইসলামি স্থাপত্যগুলির জায়গায় আসলে ছিল কোনও হিন্দু মন্দির। এমনটাই দাবি করে সম্প্রতি বারবার সরব হয়েছে একাধিক ধর্মীয় গোষ্ঠী। দিল্লির কুতুব মিনার, যা কুতুবউদ্দিন আইবকের বিজয়স্তম্ভ হিসাবেই খ্যাত, তা নিয়ে হালে বিতর্ক ঘনিয়েছে জোরদার। দাবি উঠেছে, যে সমস্ত হিন্দু ও জৈন মন্দির ধ্বংস করে গড়ে তোলা হয়েছিল এই বিজয়স্তম্ভ, তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এএসআই-এর প্রাক্তন আঞ্চলিক অধিকর্তা ধরমবীর শর্মার মন্তব্য কুতুব বিতর্কের পালে হাওয়া দিয়েছে আরও। তিনি দাবি করেছিলেন, কুতুবউদ্দিন আইবক বা তাঁর জামাতা ইলতুৎমিস নন, আদতে কুতুব মিনার তৈরি করেছিলেন হিন্দু রাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত তথা বিক্রমাদিত্য। সূর্যের গতিবিধি পরিদর্শনের জন্যই নাকি তৈরি হয়েছিল এই মিনার, এমনও দাবি করেছিলেন এএসআই-এর ওই প্রাক্তন অধিকর্তা। সব মিলিয়ে বিতর্কের জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। ওই এলাকায় মন্দির ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই মিনার সংলগ্ন চত্বরে খননকার্যের অনুমতি দিয়েছে আদালত। এই পরিস্থিতিতে এবার সামনে এল এএসআই-এর ওই পুরনো রিপোর্টটি। যা কার্যত শিলমোহর দিল কুতুব মিনার চত্বরে মন্দির থাকার দাবিতেই।
আরও শুনুন: কুতুব মিনার কি আদৌ দিল্লিতে ছিল! বিষ্ণুর সঙ্গেই বা কী যোগ এই স্তম্ভের?
জানা গিয়েছে, ১৮৭১-৭২ সালে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে এই রিপোর্টটি তৈরি করেছিলেন জেডি বেগলার এবং এসিএল কার্লাইল। সমগ্র খননকার্যের তত্ত্বাবধানে ছিলেন এএসআই-এর প্রতিষ্ঠাতা স্যার আলেকজান্ডার কানিংহ্যাম। মিনার চত্বরে পুরাতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালিয়ে যেসব তথ্য জানিয়েছিলেন তাঁরা, তার মধ্যে এ কথাও রয়েছে যে, একটি মন্দিরের জায়গায় তৈরি হয়েছে একটি মসজিদ। আপাতত কুতুব মিনার বিতর্কে নয়া মোড় এনে দিতে পারে এই রিপোর্টে পাওয়া তথ্য, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।