ইমরান খান অভিনীত ‘লাক’ নামের বলিউড সিনেমাটির কেন্দ্রেই ছিল, মানুষের ভাগ্যের জোর। মৃত্যুর মুখে পড়েও নিছক কপালজোরেই সেখান থেকে ফিরে আসত কেউ কেউ। এদিকে হতভাগ্য মানুষেরা ঢলে পড়ত মৃত্যুর কোলে। সিনেমায় নয়, বাস্তবেই এহেন এক মানুষের দেখা মেলে। সাত-সাতবার মৃত্যুকে ধোঁকা দিয়েছেন এই ব্যক্তি। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এই ব্যক্তিকে ভাগ্যবান বলা উচিত, নাকি অপয়া, তা নিয়েই বিতর্ক চলতে পারে। কী অভিজ্ঞতা হয়নি তাঁর- বিমান দুর্ঘটনা, ট্রেন দুর্ঘটনা, বাস দুর্ঘটনা ইত্যাদি প্রায় সবরকম দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। কখনও আগুন লেগে গিয়েছে গাড়িতে, কখনও আবার নিজেই গাড়ির ধাক্কা খেয়েছেন। হ্যাঁ, একের পর এক ভয়ংকর দুর্ঘটনার আঘাত সয়েও তিনি বেঁচে ফিরেছেন বটে, আর তাকে ভাগ্যের জোর বলেই দেখা যায়। কিন্তু একজনের সঙ্গেই যে এতরকম দুর্ঘটনা ঘটল, সে তো এক দুর্ভাগ্যই বটে। তাই ‘ওয়ার্ল্ড’স লাকিয়েস্ট আনলাকিয়েস্ট ম্যান’, অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান হতভাগ্য ব্যক্তির শিরোপা পেয়েছেন ক্রোয়েশিয়ার ফ্রেন সিলাক।
আরও শুনুন: নিয়মের রক্তচক্ষু, তবু খোলামেলা পোশাকেই কাতার কাঁপাচ্ছেন ক্রোয়েশিয়ার সুন্দরী
শোনা যায়, এক দুবার নয়, সাত-সাতবার নাকি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন এই ব্যক্তি। যার শুরুটা হয়েছিল ১৯৬২ সালে। ট্রেনে চেপে এক শহর থেকে আরেক শহরে যাচ্ছিলেন তিনি। লাইনচ্যুত হয়ে ট্রেনটি এক নদীতে পড়ে, যা তখন বরফে ঢাকা পড়ে ছিল। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৭ জন যাত্রীর, কিন্তু একটি হাত ভাঙা ছাড়া সিলাকের আর কিছুই হয়নি। এর পরের বছরই অসুস্থ মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য প্লেন ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু ল্যান্ডিংয়ের কিছুক্ষণ আগে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্লেনের দরজা খুলে যায়। প্লেন থেকে ছিটকে পড়েন সিলাক-সহ অনেকেই। দুজন পাইলট, এয়ারহোস্টেস সহ একাধিক যাত্রী মারা যান। কিন্তু ঘটনাচক্রে ওই ব্যক্তি গিয়ে পড়েছিলেন একটি খড়ের গাদার উপরে। ফলে এমন ভয়ংকর দুর্ঘটনার পরেও প্রায় অক্ষতই ছিলেন তিনি।
আরও শুনুন: টানা ২ মাস বিছানায় শুয়ে থাকাই কাজ, আকাশছোঁয়া বেতন ঘোষণা সংস্থার
১৯৬৬ সালে মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়েন ওই ব্যক্তি। ১৯৭০ সালে তাঁর গাড়িতে আগুন ধরে গিয়েছিল। ১৯৭৩ সালে গাড়িতে তেল ভরার সময় একটি বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর প্রায় দুই দশক তিনি নিরাপদেই ছিলেন। কিন্তু ভাগ্য ফ্রেন সিলাকের সঙ্গ ছাড়েনি। ১৯৯৫ সালে রাস্তায় হাঁটার সময় বাসের ধাক্কায় আহত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে পাহাড়ি রাস্তায় ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সিলাকের গাড়ির। প্রায় ৩০০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায় তাঁর গাড়ি। কিন্তু সিনেমার মতোই গাড়ি থেকে ছিটকে গিয়ে একটি গাছের ডালে আটকে গিয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। যেখান থেকে পরে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
চেনা পরিচিতরা তাঁকে খানিক এড়িয়েই চলতেন। বিশেষ করে তাঁর সঙ্গে গাড়িতে উঠতে চাইতেন না কেউই। তবে ফ্রেন সিলাক কিন্তু তাঁর জীবনের এই দুর্ঘটনাগুলি নিয়ে আদৌ চিন্তা করতেন না। বরং মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পারাটাই তাঁর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই নিজেকে দুর্ভাগার বদলে ভাগ্যবান বলেই ভাবতেন তিনি। একবার লটারিতে এক লক্ষ মার্কিন ডলার জেতার পর তাঁর এই ভাবনাই আরও জোরালো হয়েছিল। ২০১৬ সালে ৮৭ বছর বয়সে মারা যান ফ্রেন সিলাক। এবং সেই মৃত্যু এসেছিল স্বাভাবিকভাবেই, কোনও দুর্ঘটনার কারণে নয়। আর এই মৃত্যুর ঘটনাতেই বোধহয় প্রমাণ হয়ে যায়, আদৌ দুর্ভাগা ছিলেন না ফ্রেন সিলাক, বরং পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তির তকমাই পাওয়া উচিত তাঁর।