পাঞ্জাবে ‘স্টেট ডিজাস্টার রেস্পন্স ফোর্স’-এর তত্ত্বাবধানে রাজ্য জুড়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে ২০,০০০-এরও বেশি এনসিসি ক্যাডেটকে। তাদের শেখানো হচ্ছে, হঠাৎ যুদ্ধ-অবস্থা দেখা গেলে কীভাবে সুরক্ষিত থাকা যাবে। বিমান হামলা, নিউক্লিয়ার অ্যাটাক, বায়োলজিক্যাল বা কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ার, প্রতিটি অবস্থা থেকে বাঁচতে ঠিক কী কী উপায় অবলম্বন করা উচিৎ, তার সাধারণ ধারণা দেওয়া হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের। বলা বাহুল্য, যোগদানকারীদের মধ্যে নব্বুইভাগই মূলত স্কুল অথবা কলেজের ছাত্রছাত্রী।
যুদ্ধ যখন তার সর্বশরীর নিয়ে নেমে আসে কোনও দেশের উপর, তখন কেবল বাহ্যিক ক্ষতি করে থেমে থাকে না। বরং প্রবেশ করে সেখানকার মানুষদের মাথার ভিতরের প্রতিটা রন্ধ্রে। এক লহমায় সে দেশের মানচিত্রের মতোই পালটে দেয় বাসিন্দাদের মনের রূপরেখা। ‘স্বাভাবিক’-এর মূল ধারণাটিকেই আঘাত করে যেন। সাম্প্রতিককালে এর জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাঞ্জাব। বাইরের যুদ্ধ আপাতভাবে স্থগিত হওয়ার পরেও সেখানকার মানুষেরা প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধ ভয়ে বাঁচছে। যদিও সেখানেই থেমে থাকেনি তাঁরা, ভয়কে হাতিয়ার করে শুরু করেছে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি।
কোনও মানুষই বোধহয় এক ভয় দুইবার পেতে চায় না। নয় সে জায়গা ছেড়েই সরে দাঁড়ায়, নয়তো নিজেকে এমনভাবে বলীয়ান করে নিতে চায়, যাতে দ্বিতীয়বারের আঘাত আগের মতো ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে তাকে। আর তাই এখন থেকেই পাঞ্জাবের মানুষেরা আপতকালীন স্কিল শেখার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় থেকেই পাকিস্তানের বর্ডার ঘেঁষা এই রাজ্যটি সাক্ষী থেকেছে নানান ভয়াবহ সংঘর্ষের। তাই হয়তো আপাতত দেশস্তরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলেও দেশবাসীরা এমারজেন্সি অবস্থার প্রস্তুতিকেই বেছে নিয়েছে। দেখা গিয়েছে, পাঞ্জাবে ‘এনসিসি’ ও ‘সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং’-এ দলে দলে ভর্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ‘স্টেট ডিজাস্টার রেস্পন্স ফোর্স’-এর তত্ত্বাবধানে রাজ্য জুড়ে প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে ২০,০০০-এরও বেশি এনসিসি ক্যাডেটকে। তাদের শেখানো হচ্ছে, হঠাৎ যুদ্ধ-অবস্থা দেখা গেলে কীভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে তারা। একই সঙ্গে নিজের সহনাগরিককে কীভাবে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, তাও শেখানো হচ্ছে এই প্রশিক্ষনের অংশ হিসেবে। বিমান হামলা, নিউক্লিয়ার অ্যাটাক, বায়োলজিক্যাল বা কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ার, প্রতিটি অবস্থা থেকে বাঁচতে ঠিক কী কী উপায় অবলম্বন করা উচিৎ, তার সাধারণ ধারণা দেওয়া হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের।
বলা বাহুল্য, যোগদানকারী এনসিসি ক্যাডেটদের মধ্যে নব্বুইভাগই মূলত স্কুল অথবা কলেজের ছাত্রছাত্রী। দেশের দুর্দিনে যে গা-বাঁচানোর বদলে আপতকালীন স্কিল শেখার প্রতি ঝুঁকেছে রাজ্যের তরুণ প্রজন্ম, তা যেন নতুন করে স্বপ্ন দেখায় আপামর দেশের মানুষকে। অনেকেই মনে করেন, ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার লড়াইয়ে বুকে যে আগুন নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল তৎকালীন তরুণ সমাজ, তা বর্তমান সময়ে একেবারেই বিরল। বরং এখনকার তরুণেরা আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর। সেই ধারণাকেই যেন সমূলে ভেঙে দিতে চায় পঞ্জাবের অল্পবয়সী স্কুল-কলেজ পড়ুয়ার দল। যেকোনও সংঘাতমূলক অবস্থার নিরসন করতে যে বারে বারে ছাত্রছাত্রীরাই এগিয়ে এসেছে সবার প্রথম, সেই ঘটনা আরও একবার তারই সাক্ষ্য দেয়।
যদিও বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান। অনেকেই মনে করছেন, এ-ও এক হুজুগ বই কিছু না! রাজনৈতিক পরিস্থিতি খানিক থিতু হলেই মানুষ আগ্রহ হারাবে এই সমস্ত স্কিল শিক্ষার প্রতি। অন্য যেকোনও হুজুগের মতো অল্পদিনেই গুরুত্ব হারাবে এই প্রশিক্ষনও। তাছাড়া সত্যিই কি কয়েকদিনের ট্রেনিং পর্ব মানুষকে সত্যিকারের যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে দিতে পারে? চারিপাশে ভয়াবহ বিদ্বেষের অবস্থা তৈরি হলে কি এই সাধারণ ‘সেফটি গাইড’ মাথায় রেখে পদক্ষেপ করতে পারবে সাধারণ মানুষ? তা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েই যায়।
তবে যাই হোক না কেন, পাঞ্জাববাসীর আপতকালীন স্কিল শেখার ইচ্ছে যেন নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে গোটা দেশকেই। যদি আবারও ক্ষোধে ফেটে পড়ে দুই দেশ, যদি আবারও গোলাগুলির মাঝে পড়তে হয় পাঞ্জাবকে, তবে কি সেখানের বাসিন্দারা আবারও ভয় পাবেন? লুকিয়ে পড়বেন টেবিলের তলায়… কিংবা ভিটেজমি ছেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে খোলা আকাশের নিচে? উহু, কখনওই না! কতদূর পারবেন, সে প্রশ্ন আলাদা। তবে চাইবেন না কখনওই। বরং যুদ্ধের চোখে চোখ রেখে রুখে দাঁড়াবেন তাঁরা, সামনের সারিতে থাকতে অল্পবয়সীদের দল। হৃদয়ের ভিতর শোনা যাবে ধ্বনি ‘দু’বেলা মরার আগে মরব না… আমি ভয় করব না, ভয় করব না!’