বিয়েবাড়ির সব আনন্দ কোলাহল থেমে গিয়েছিল এক মুহূর্তেই। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল সদ্যবিবাহিতা মেয়েটি। কিন্তু সেই চরম শোকের মধ্যেও এক মানবিক সিদ্ধান্ত নিলেন সন্তানহারা মা-বাবা। ঘোষণা করলেন মেয়ের মরণোত্তর অঙ্গদানের। মানবিকতার এক সহজ পাঠও যেন শিখিয়ে দিলেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সেদিনই তার গলায় উঠেছিল মঙ্গলসূত্র। সিঁথি ভরে উঠেছিল সিঁদুরের রঙে। অনেক ভালবাসা নিয়ে সেজে উঠেছিল বিবাহবাসর। কিন্তু সঙ্গীর হাত ধরে সেই বাসরে প্রবেশ করা আর হয়ে উঠল না তার। তার আগেই, মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সেই পৃথিবী থেকেই বিদায় নিল মেয়েটি। আর বুকে পাথর চেপে এমন এক সিদ্ধান্ত নিলেন তার মা-বাবা, যাতে মৃত্যুর পরেও রয়ে যায় তার অস্তিত্ব। মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বুঝি এভাবেই মেয়েকে ধরে রাখলেন তাঁরা।
আরও শুনুন : বাজল বাজনা, ঘর সাজল বিয়েবাড়ির মতো, কফিনবন্দি তরুণ জওয়ানের জন্য আয়োজন মা-বাবার
আসলে, সন্তানকে ঘিরে কত রঙিন স্বপ্নই না বোনেন কোনও দম্পতি! তার সুখ, তার সাফল্য, তার ভবিষ্যতের জন্য উজাড় করে দেন নিজেদের। ব্যতিক্রম ছিলেন না এই দম্পতিও। মেয়ে চৈত্রাকে সাধ্য অনুযায়ী বড় করে তুলেছিলেন তাঁরা। M.Sc পাশ করার পর টিচার ট্রেনিং কোর্স করেছে সে। এবার বিয়ের আয়োজনের পালা। বর এল বেঙ্গালুরু শহর থেকে। সাজিয়ে গুছিয়ে বিয়ে দিয়ে মেয়েকে নতুন জীবনের পথে রওনা করিয়ে দিলেন মা-বাবা।
কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক। তাঁরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, শুরু হতে না হতেই চিরতরে শেষ হয়ে যাবে এই যাত্রা। বিয়ের রাতে উৎসবের মঞ্চেই জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়েছিল মেয়েটি। সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু কেউই ভাবতে পারেননি যে তার জ্ঞান আর কোনও দিনই ফিরে আসবে না। কোনওরকম চিকিৎসাতেই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না দেখে চিকিৎসকেরা রোগীকে পাঠিয়ে দেন নিমহ্যান্সে। বেঙ্গালুরুর যে প্রতিষ্ঠানটি স্নায়ুরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশ্ব জুড়েই সুপরিচিত। কিন্তু ততক্ষণে না-ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছে সদ্যবিবাহিতা মেয়েটি। ৬ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয়েছিল তার। মাত্র চারদিনের মাথায়, ১০ ফেব্রুয়ারি তার ব্রেন ডেথের ঘোষণা করলেন চিকিৎসকেরা। আর এরপরেই, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি সন্তানহারা মা-বাবা। মেয়ের মরণোত্তর অঙ্গদান করতে রাজি হয়ে যান তাঁরা। মেয়েকে বাঁচাতে না পারলেও, তার শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আরও কিছু মানুষকে জীবনের আশ্বাস দেবে, এই সান্ত্বনাকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন শোকাহত দম্পতি।
আরও শুনুন : শহিদ ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার স্মৃতি নিয়েই দিন কাটাচ্ছেন প্রেমিকা ডিম্পল, শুনে আপ্লুত কিয়ারা
চৈত্রার শরীর থেকে দুটি কিডনি, হার্ট ভালভ এবং দুটি চোখের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার মা-বাবার এমন কাজকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন সকলেই। ব্যক্তিগত শোকের ঊর্ধ্বে অপরের ভাল চাওয়াকে স্থান দিয়ে যেন মানবিকতার নয়া পাঠ শিখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।