এক দেশে হোক এক ভাষা। এমনই দাবিতে সরব দেশের একটি পক্ষ। রয়েছে বিরোধিস্বরও। তবে এ দেশ তো বরাবরই বহুস্বরে বিশ্বাসী। আর তা যে কোনও ক্ষেত্রেই কোনও দিনও সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়নি, তার প্রমাণ মিলেছে বারবার। যতই হিন্দি ভাষার আগ্রাসনের পক্ষে সওয়াল চলুক দেশ জুড়ে, কোনও ভাষার গুরুত্বই যে কারওর থেকে কম নয়, অন্তত শিক্ষার ক্ষেত্রে যে নয়ই, তা ফের একবার প্রমাণ করে দিল বিহারের একটি স্কুল। কী হয়েছে সেখানে, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হিন্দি বিতর্কে উত্তাল দেশ। আঞ্চলিক ভাষার উপরে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন মানতে নারাজ দেশের বহু রাজ্যই । এ নিয়ে একাধিক বার বিরোধিতার সুর চড়িয়েছে তামিলনাড়ু, কর্ণাটক বা বাংলার মতো রাজ্যগুলি।
দিন কয়েক আগেই হিন্দি ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন দক্ষিণী অভিনেতা সুদীপ কিচ্চা। তার জন্য তাঁকে টুইটারে একহাত নিয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা অজয় দেবগন। ব্যাপারটি নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। রাজনীতিক বৈষম্য ভুলে সুদীপের পাশে দাঁড়িয়েছিল গোটা কর্ণাটক। ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের একটি বক্তব্যকে ঘিরে। বেশ কয়েক দিন আগেই হিন্দু ভাষার উপর জোর দেওয়ার কথা বলেন শাহ। তখন থেকেই প্রতিবাদে সরব হন বহু নেতা ও শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা। সুদীপ-অজয় দ্বৈরথের মাঝেই ফের ঘনিয়ে উঠেছিল হিন্দি বিতর্ক। হিন্দি না জানলে দেশে থাকার অধিকার নেই বলে বিতর্ক বাড়ান উত্তরপ্রদেশের এক মন্ত্রী। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষমেশ আসরে নামতে হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে।
আরও শুনুন: ‘হিন্দি বলতে না-পারলে অধিকার নেই দেশে থাকার’, বিতর্কিত মন্তব্য উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীর
তবে এ কোনও নতুন বিষয় নয়। মাঝেমধ্যেই হিন্দি ভাষা বিতর্ক উস্কে ওঠে দেশ জুড়ে। আবার থিতিয়েও পড়ে। কিন্তু তার মাঝখানে যেটা থেকে যায়, সেটা মুদ্রার অন্য পিঠ। যেখানে পাশাপাশি থাকে একাধিক ভাষা, একাধিক মতামত, একাধিক নীতির মানুষজন। কোনও রকম অশান্তি বা দ্বন্দ্ব ছাড়াই। আর মুদ্রার সেই পিঠটাই সম্প্রতি দেখা গেল বিহারের কাতিহার জেলার একটি স্কুলে।
স্কুলের ক্লাসরুম জোড়া একটিই মাত্র ব্ল্যাকবোর্ড। তার একধারে পড়ানো হচ্ছে হিন্দি। অন্য ধারে উর্দু। একই ক্লাসে দাঁড়িয়ে পড়ুয়াদের দুটি আলাদা ভাষার শিক্ষা দিচ্ছেন দুই শিক্ষক। এমনই একটি অভিনব ক্লাসরুমের ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা ইতিমধ্যেই বেশ চাঞ্চল্য তৈরি করেছে।
আরও শুনুন: ভাষা ব্যবহারে বিধিনিষেধ কাম্য নয়, হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেই সওয়াল সোনু নিগমের
আসলে এ দেশ যে বহুমত, বহু স্বরে বিশ্বাসী তাই বোধহয় প্রমাণ করে এ দৃশ্য। তবে সে সবই তো হল, কিন্তু দুটি ভাষা একসঙ্গে কীভাবে শিখবে পড়ুয়ারা ভাবছেন তো? আর সেই রহস্যেরই সমাধান করে দিয়েছেন কাতিহারের আদর্শ মিডল স্কুলের সহশিক্ষিকা কুমারী প্রিয়াঙ্কা। জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে ওই জেলারই একটি উর্দু প্রাইমারি স্কুলকে এই স্কুলের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। আর তার পর থেকেই পড়ুয়াদের সুবিধার জন্য হিন্দি ও উর্দু উভয় ভাষাতেই সমস্ত বিষয় পড়ানো হয় স্কুলটিতে। ভাইরাল সেই ছবি দেখে কেউ কেউ ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ আবার সমালোচনা করতেও ছাড়েননি। তবে নিন্দুকেরা যাই বলুক, এই সমন্বয়ের ভাবনাটাই তো আমাদের দেশ। যা আদতে নষ্ট করা সম্ভব নয় কোনও বিচ্ছিন্নতাকামী শক্তির পক্ষেই।