দোকানের বাইরে বাধ্যতামূলক ভাবে লিখতে হবে মালিকের নাম। কানওয়ার যাত্রার আগে এমনই নির্দেশ জারি করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ঠিক কেন এমন নিয়ম? এই নিয়ে বিরোধী পক্ষের নেতারাই বা কী বলছেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
শ্রাবণ মাস পড়তেই শুরু কানওয়ার যাত্রার তোড়জোড়। শিবভক্তরা প্রায় কয়েকশো কিমি হেঁটে পৌঁছবেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে। দীর্ঘ যাত্রাপথে তাঁদের কোনওরূপ অসুবিধা যাতে না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর উত্তরপ্রদেশ সরকারের। আর সেই প্রসঙ্গেই সে রাজ্যের প্রশাসন জারি করেছে নয়া নিয়ম। রাজ্য পুলিশের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কানওয়ার যাত্রীরা যে পথ ধরে হাঁটবেন সেখানকার সব দোকানে যেন মালিকের নাম লেখা থাকে।
আরও শুনুন: ইসলাম মেনে দাড়ি রেখে শাস্তি কনস্টেবলের, পালটা দেশের বহুত্বে জোর আদালতের
প্রশ্ন হচ্ছে, এমন নির্দেশের কারণ কী?
পুলিশের দাবি, দোকানির নাম দেখেই শিবভক্তরা ঠিক করবেন সেই দোকানের খাবার উপযুক্ত কি না। অর্থাৎ, দোকানি যদি মুসলিম হন তাহলে সেখান থেকে কিছু কিনবেন না শিবভক্তরা। কেবলমাত্র হিন্দু দোকান হলে তবেই কিছু কিনতে পারবেন তাঁরা। নাম না থাকলে দোকানির ধর্ম বুঝতে অসুবিধা হবে। তাই যাত্রার আগে এই নাম রাখার নির্দেশ প্রশাসনের। স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়ে বিরোধী শিবিরের নেতারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। সপা নেতা অখিলেশ যাদবের প্রশ্ন, কোনও দোকানির নাম যদি হিন্দু নামেই হয়, তাহলে কেউ কীভাবে ধর্ম বুঝবে? একইভাবে AIMIM প্রধান ওয়েসিও পুলিশের এই নির্দেশের জোর সমালোচনা করেছেন। বিরোধী নেতারা একে সামাজিক অপরাধ বলেই চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের সাফ দাবি, এইভাবে মুসলিম ব্যবসায়ীদের বিপাকে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই আবহে হিন্দু মঞ্চও পালটা দিয়েছে। হিন্দু শিবিরের দাবি, ইচ্ছা করে মুসলিমরা ধর্ম লুকিয়ে হিন্দু তীর্থক্ষেত্রে ব্যবসা করতে যায়। পাছে হিন্দু ভক্তরা জিনিস না কেনে, সেই ভয়ে নিজেদের নাম অবধি বলেন না মুসলিম বিক্রেতারা। যদিও হিন্দু মঞ্চের এই দাবি নিয়েও কটাক্ষ করেছেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। তাঁদের কথায়, কোনও ব্যবসায়ীর ধর্ম দেখে কেন এই ধরনের বিচার হবে?
আরও শুনুন: দিল্লিতেই কেদারনাথ দর্শন! নতুন শিব মন্দির প্রতিষ্ঠায় গর্জে উঠলেন সনাতন ধর্মগুরুরা
আসলে, এই কানওয়ার যাত্রায় শুধুমাত্র হিন্দুরাই অংশ নেন। রীতিমতো কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে শ্রাবণ মাসে এই যাত্রা সম্পূর্ণ করেন তাঁরা। এই কদিনে আমিষ ছুঁয়েও দেখেন না কেউ। পাশাপাশি বাইরের দোকানের খাবার এড়িয়ে চলেন। কারণ কানওয়ার যাত্রীদের অনেকেই মনে করেন, যাত্রা চলাকালীন কোনও মুসলিমের তৈরি খাবার খাওয়া পাপ। এদিকে দীর্ঘ যাত্রাপথে কিছু না খেলেও চলবে না। তখন ভরসা বলতে রাস্তার ধারের দোকান। এবার সেই দোকানে কতটা নিয়ম মেনে নিরামিষ রান্না করা হচ্ছে তা প্রশ্নের বিষয়। হিন্দু দোকান হলে ভয়ের ব্যাপার নেই, কারণ শ্রাবণ মাসে এমনিই অনেক হিন্দু নিরামিষ খান। কিন্তু মুসলিম সমাজে এই ধরনের কোনও নিয়ম নেই। কাজেই কোনও মুসলিম দোকানি যদি আমিষ রান্না কানওয়ার যাত্রীদের খাওয়ান, তাহলে বেজায় অমঙ্গল হবে বলেই মনে করেন অনেকে। শুধু তাই নয়, মুসলিমের তৈরি খাবারে আরও অনেক কারণেই আপত্তি থাকে এই বিশেষ তীর্থযাত্রীদের। তাই তাঁদের কথা ভেবে ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এর আগে কানওয়ার যাত্রা চলাকালীন মাংসের দোকান বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এবার রেস্তোরাঁ, হোটেল, ধাবা কিংবা ছোটখাটো খাবারের দোকানিদেরও বাধ্যতামূলকভাবে নিজেদের নাম বাইরে লিখে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং এই নির্দেশ যে শুধুমাত্র ধর্ম পরিচয় বোঝার জন্য, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই যোগীরাজ্যের প্রশাসনের এই আচরণে রীতিমতো ক্ষুব্ধ ওয়েসি, আখিলেশ সহ বিরোধী শিবিরের নেতারা।