এক দেশ-এর ধারণা প্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য। এবার মধ্যপ্রদেশে উন্মোচিত হতে চলেছে ১০৮ ফুটের শঙ্করাচার্য মূর্তি। বছর পাঁচেক আগেই এমন মূর্তি তৈরির ভাবনা প্রকাশ্যে এনেছিল সে রাজ্যের সরকার। এবার সামনে এল মূর্তি উন্মোচনের দিনক্ষণ। এ প্রসঙ্গে ঠিক কী জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী? আসুন শুনে নিই।
সনাতন ধর্ম প্রচার করার লক্ষ্যে অল্প বয়সেই ঘর ছেড়ে বেরিয়েছিলেন শঙ্করাচার্য। হিন্দুধর্মকে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পিছনে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। প্রথম থেকেই সেই আদিগুরু শঙ্করাচার্যকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। আর এবার এক দেশ এক জাতির ধারণাকে আরও পোক্ত করতেই প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে শঙ্করাচার্যের ১০৮ ফুট উঁচু মূর্তি। মাত্র ৩২ বছরের জীবনকালেই গোটা দেশে ধর্মভাবনার প্রচার করেছিলেন আদি শঙ্করাচার্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে তাঁর মন্দির। অনুগামীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। এবার তাঁর এক বিশাল মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে ১০৮ ফুটের সেই মূর্তির ছবিও।
আরও শুনুন: সংস্কৃত থেকেই এসেছে ‘আল্লাহ্’ শব্দটি, দাবি বেনারসের শঙ্করাচার্যের
হিন্দুধর্মকে গোটা দেশে নতুন করে চিনিয়েছিলেন শঙ্করাচার্য, এমনটাই মত সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মঠ বা আশ্রমগুলোকেই এই মুহূর্তে সনাতন ধর্মের পীঠস্থান বলা যেতে পারে। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না, সনাতন ধর্মবাদীদের কাছে এই ধর্মগুরুর মাহাত্ম্য কতখানি। এর আগে উত্তরাখণ্ডে ১২ ফুটের শঙ্করাচার্য মূর্তির উন্মোচন করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে এবার উন্মোচিত হতে চলেছে আদিগুরুর সবথেকে বড় মূর্তি। উচ্চতায় ১০৮ ফুটের এই মূর্তিটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধাতু। খরচ হয়েছে প্রায় ২১০০ কোটি টাকা। তবে মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল বছর পাঁচ আগেই। মূর্তিটি কেমন দেখতে হবে, ২০১৮ সালে সেই ছবি সামনে এনেছিলেন শোলাপুরের এক শিল্পী। এরপর রাজ্যের প্রায় ২৩ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত ঘুরে হয়েছিল ‘একাত্ম যাত্রা’। সেখানে অনেকেই মূর্তি তৈরির জন্য লোহা দান করেছিলেন। সেই সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে শঙ্করাচার্যের এই মূর্তিতে। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম ওমকারেশ্বরে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে মূর্তিটি। আসলে মাত্র ৮ বছর বয়সে গুরুর সন্ধানে ওমকারেশ্বরে এসেছিলেন শঙ্করাচার্য। তারপর এখান থেকে দেশভ্রমণের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলেন। আগামী দিনে এই স্থানটি ‘একাত্ম ধাম’ নামে পরিচিত হবে, এমনই উদ্যোগ হিন্দুত্ববাদীদের। মূর্তি উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠানেরও। জানা গিয়েছে, সেদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্রাহ্মণরা এসে মূর্তি প্রতিষ্ঠায় বৈদিক রীতিতে অর্চনা করবেন।
আরও শুনুন: মক্কায় আছেন স্বয়ং মক্কেশ্বর মহাদেব! পুরীর শঙ্করাচার্যের দাবিতে শুরু জোর চর্চা
সম্প্রতি মূর্তি উন্মোচন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান। শঙ্করাচার্যের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সনাতন ধর্ম প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি শঙ্করাচার্যের প্রতিষ্ঠিত মঠের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে এই মূর্তি দর্শনের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমাবেন অনেকেই। একদিকে পর্যটন শিল্পের উন্নতি, সেইসঙ্গে সনাতন ধর্মকে সামনে রেখে এক দেশ-এর ধারণা প্রতিষ্ঠাতেও অন্যতম প্রতীক হবে এই মূর্তি, এমনটাও মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।