আত্মনির্ভর ভারতের নতুন সূর্যোদয়। নেতারা ব্যস্ত সেই ‘উৎসব’ পালনে। একইদিনে আইপিএল ফাইনাল। ক্রিকেট জগতের ব্যস্ততাও চোখে পড়ার মতো। আবার সেই দিনেই পুলিশ ভ্যানে পদকজয়ী কুস্তিগিররা। অপরাধীর আসনে, বিষণ্ণ চেহারায় বসে আছেন। এই ছবি কাঁহাতক সহ্য করা যায় বলুন? এ তো দেশের অপমান, দশের অপমান। তাই কায়দা করে ছবিটাই বদলে দেওয়া হল। আর সেই মিথ্যে প্রচারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন বজরং পুনিয়া। কিন্তু বাকিরা? আর কতজন মুখ খুললেন ‘তাঁদের’ জন্য? আসুন শুনে নিই।
কেউ মাটিতে পড়ে আছেন। কাউকে জোর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার কেউ বিষণ্ণমুখে পুলিশ ভ্যানে বসে আছেন। এ ছবি আমাদের চেনা। সংসদ ভবন, আইপিএল, সবকিছু ছাপিয়ে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ভরে উঠেছিল কুস্তিগিরদের ছবিতে। কিন্তু এমনটা তো চলতে পারে না! তাহলে তো সরকারের অপমান, দেশের অপমান। তাই তড়িঘড়ি ভাইরাল করা হল আরও একটা ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে পুলিশ ভ্যানে হাসিমুখে বসে আছেন ভিনেশ ও সঙ্গীতা।
আরও শুনুন: সংসদ ভবন উদ্বোধনে যজ্ঞ থেকে সর্বধর্ম প্রার্থনা, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে খুশি ধর্মগুরুরা
ব্যস আর কী চাই! এতেই সবাই ভেবে নেবেন সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। কুস্তিগিরদের আর কোনও ক্ষোভ নেই। সবাই আবার মন দেবেন ‘সেঙ্গল’ প্রতিষ্ঠার উৎসবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। সেই ছবি যে সম্পূর্ণ ভুয়ো, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইট করে প্রমাণ করে দেন বজরং পুনিয়া। আসল ছবি ও ভাইরাল হওয়া ছবি পোস্ট করেন তিনি। অভিযোগের আঙুল তোলেন আইটি সেলের দিকে। সেইসঙ্গে হুঁশিয়ারি দেন, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। তাঁর পোস্ট দেখে আবারও নিন্দার ঝড় শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু ব্যস, ওইটুকুই। আর পাঁচটা ভুয়ো ছবি ভাইরাল হওয়ার মতোই এই ঘটনা প্রতিপন্ন হল। আসল জায়গায় কোনও ফারাক পড়ল না। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও কোনও সুবিচার পেলেন না সাক্ষী-বজরং-রা। বরং তাঁদের লড়াই যে একেবারেই অসম শক্তির বিরুদ্ধে, সে কথাই আরও দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা পেল। এক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল, সতীর্থদের সহযোগ। ক্রীড়াজগতের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যকে যদি এগিয়ে এসে প্রতিবাদ জানাতেন তাহলেও নাহয় কিছু বদলের আশা করা যেত। কিন্তু কোথায় কী! ঘটনায় কোনও প্রতিক্রিয়া নেই ধোনি-কোহলির মতো ক্রিকেট তারকাদের। এমনকি বিগত কয়েকদিন খবরের শিরোনাম দখল করা, শুভমন-হার্দিকও একেবারেই চুপ। একা প্রতিবাদে শামিল হলেন সুনীল ছেত্রী। স্পষ্ট জানালেন, এই ঘটনা কখনই কাম্য নয়। একইভাবে তাঁর সুরে সুর মেলালেন নিরাজ, ইরফান। কিন্তু বাকিরা যেন নীরব দর্শক হয়েই থেকে গেলেন।
আরও শুনুন: খ্রিস্টান হয়েও কেন পা ছুঁয়ে মোদিকে প্রণাম? ব্যাখ্যা দিলেন পাপুয়া নিউ গিনির প্রধানমন্ত্রী
তবু লড়াই থামাবেন না। এমনই পণ করেছেন পদকজয়ী কুস্তিগিররা। কারণ এই লড়াই আর স্রেফ আত্মসম্মানের লড়াই নেই। পরিণত হয়েছে মহিলাদের উপর হওয়া অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার লড়াইয়ে। সাক্ষী-ভিনেশদের উপর হওয়া নিগ্রহ যেন বয়ে আনল অশনিসংকেতের বার্তা। তাই একে কেবলমাত্র অভিযান আটকানোর ঘটনা হিসাবে দেখা ভুল হবে। মনে রাখতে হবে, অভিযানটি কীসের জন্য ছিল! যৌন নিগ্রহের প্রতিকার চেয়ে যদি এই গণতন্ত্রে নিগ্রহই উপহার হয়ে আসে, আর তার শিকার হয়ে ধুলোয় লুটোন দেশের তারকা মহিলা অ্যাথলিটরা, তবে তার জোরালো প্রভাব দেশের নারীদের উপর পড়তে বাধ্য। সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধেই আগামীতে আরও জোরালো হোক দেশবাসীর কণ্ঠ, এমনটাই প্রত্যাশা।