মৃত ব্যক্তির স্মৃতিতে আয়োজন করা হয় শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ পূজাপাঠ করা হয় সেখানে। তাই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ওই ব্যক্তিকে দেখতে না পাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। যাঁর শ্রাদ্ধ তিনি নিজেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন এদিক ওদিক। আমন্ত্রিতদের আপ্যায়নও করছেন তিনিই। কীভাবে সম্ভব এই ঘটনা? আসুন শুনে নিই।
নিজেই নিজের শ্রাদ্ধের আয়োজন করেছেন এক বৃদ্ধ। ঘটা করে লোক ডেকে খাইয়েছেনও তিনি নিজেই। ঘটনায় রীতিমতো অবাক গোটা গ্রামের মানুষ। কিন্তু এতে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখছেন না ওই বৃদ্ধ। অবশ্য নেপথ্যে তিনি যা যুক্তি রেখেছেন, তারপর এই ঘটনা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়াই যায়।
আরও শুনুন: হনুমান কি সত্যিই ‘বাপ তুলে’ কথা বলতেন! কী জানাচ্ছে বাল্মীকির রামায়ণ?
ঠিক কী ঘটেছে?
উত্তরপ্রেদেশের উন্নাও গ্রামের বাসিন্দা জটা শঙ্কর। বয়স প্রায় ৭০। দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সঙ্গে বনিবনা হয় না তাঁর। তাই স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে থাকেন না তিনি। গ্রামের প্রান্তে আলাদা বাড়ি বানিয়েছেন। সেখানেই দিন কাটান। কালেভদ্রে পরিবারের কেউ দেখা করতে আসেন। অবশ্য কেউ এলেও সমস্যা। তিনি এমন কিছু ঘটনা ঘটাবেন, যাতে ফের অশান্তি শুরু হতে বাধ্য। গ্রামের মানুষও এঁদের এই অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই আলাদা করে জটা শংকর কে নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাতেন না কেউই। কিন্তু বছর দুই আগে ওই বৃদ্ধ অদ্ভুত এক কাণ্ড ঘটিয়ে বসেন। যার জেরে গ্রামের সকলেই বেশ অবাক হন। আসলে তিনি নিজেই একটা চাতাল তৈরি করে সকলকে বলতে থাকেন, মৃত্যুর পর তাঁকে যেন এখানেই দাহ করা হয়। কেউ বেঁচে থাকতে এমনটা করতে পারেন বলে ভাবতেই পারেননি অনেকে। কিন্তু সম্প্রতি সকলকে আরও অবাক করেছে ওই বৃদ্ধের নতুন কীর্তি। শুধুমাত্র চিতা সাজানোর জায়গা নয়, নিজের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানও আয়োজন করেছেন তিনি নিজেই। তাও বেশ ঘটা করে। গ্রামের অধিকাংশই সেই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত ছিলেন। সকলের জন্যই ছিল প্রীতিভোজের আয়োজন। কিন্তু যার শ্রাদ্ধ তিনি নিজেই যদি সেই অনুষ্ঠানে হাজির থাকেন, তাহলে তো অবাক হওয়াই স্বাভাবিক।
আরও শুনুন: ছোটো জামা পরলে প্রবেশ নিষেধ, ফতোয়া জারি শিমলার শতাব্দীপ্রাচীন মন্দিরে
যদিও এ ব্যাপারে কেউ প্রশ্ন করলে, সাফ উত্তর দিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাঁর মত মেলে না। প্রায়শই অশান্তি লেগে থাকে। তাই তাঁর মনে হয়েছে, মৃত্যুর পর পরিবারের কেউই ঠিকমতো তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করবেন না। এদিকে ওই অনুষ্ঠান না হলে তিনি মৃত্যুর পরও শান্তি পাবেন না। তাই নিজের শান্তির ব্যবস্থা নিজেই সেরে রাখছেন। আগেভাগেই শ্রাদ্ধ করে লোকজন খাইয়ে দিচ্ছেন তিনি। যাতে মৃত্যুর পর আত্মার মুক্তিলাভে কোনও অসুবিধা না হয়। বলাই বাহুল্য, তাঁর এই সিদ্ধান্তও ভালোভাবে নেয়নি পরিবারের লোকজন। প্রথমবার এমন অদ্ভুত কথা শুনে বেজায় চটে যান তাঁর স্ত্রী-সন্তান সকলেই। কিন্তু কোনওদিনই তাঁদের আপত্তিতে বিশেষ আমল দেন না ওই বৃদ্ধ। এক্ষেত্রেও যার ব্যতিক্রম হয়নি। ইচ্ছা মতো নিজের শ্রাদ্ধের আয়োজন করে গ্রামের লোককে পেট ভরে খাইয়েছেন তিনি নিজেই।