রাম মন্দির তৈরিকে সামনে রেখে ভোটব্যাঙ্ক ভরাবে বিজেপি। শুরু থেকেই এই অভিযোগে সরব কংগ্রেস নেতৃত্ব। পালটা বিজেপির তরফেও হিন্দুবিরোধী তকমা সাঁটা হয়েছে হাত শিবিরের দরজায়। সেই বিতর্কে নতুন প্রলেপ পড়ল শিবের নামে। ‘রামের পালটা শিব’-কে হাতিয়ার করতে গিয়েই বিপাকে মল্লিকার্জুন খাড়গে। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রাজনীতির ময়দানে ধর্মের আনাগোনা নতুন নয়। বিজেপির হাত ধরে চলতি নির্বাচনে তা আরও প্রকট হয়েছে বলা যায়। রাম মন্দির উদ্বোধন থেকে রামনবমী উদযাপন, সবেতেই রাজনীতির প্রসঙ্গ জুড়ছে। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক তরজায় ধর্মের যোগ বেশ শোরগোল ফেলছে রাজনৈতিক মহলে। সেখানেই সাম্প্রতিক যোগ খাড়গের করা ‘রামের পালটা শিব’ মন্তব্য।
লোকসভা নির্বাচনের আগে রাম মন্দির উদ্বোধন। এই নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধী শিবিরের অনেকেই। এমনকি উদ্বোধনের অনুষ্ঠান বয়কট করেও জোর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন কেউ কেউ। তালিকায় কংগ্রেস নেতৃত্বরা অবশ্যই ছিলেন। সেই নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেসকে হিন্দুবিরোধী তকমা দিতে দুবার ভাবেনি বিজেপি। বিভিন্ন সভায় এই ইস্যুতে হাত শিবিরকে একহাত নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। পালটা তোপ কংগ্রেসের তরফেও এসেছে। কিন্তু লাভ হয়নি তেমন। বরং বিভিন্ন মন্তব্য বিপদের দিকেই ঠেলেছে কংগ্রেসকে। এমনই মন্তব্য করতে গিয়ে এবার বিতর্কে জড়ালেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে। কিছুদিন আগে ছত্তিশগঢ়ের কংগ্রেস প্রার্থী শিবকুমার দাহিয়ার হয়ে প্রচারে গিয়ে খাড়গে বলেন, “ইনিই রামের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী, কারণ এঁর নাম শিব।” শুধু তাই নয়, তাঁর নামের অর্থও যে দেবাদিদেব মহেশ্বর সে কথাও মনে করিয়ে দেন মল্লিকার্জুন খাড়গে। তাঁর ইঙ্গিত রামকে হারানোর জন্য শিবই যথেষ্ট। বলাই বাহুল্য, এক্ষেত্রে তিনি রাম মন্দির তৈরি নিয়েই বিজেপিকে তোপ দাগতে চেয়েছেন।
কিন্তু বিজেপি এই তোপ সহজ ভাবে নেয়নি। রাজনৈতিক তরজার বদলে, এই মন্তব্যকে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির। যোগী আদিত্যনাথের কথায়, এইভাবে কংগ্রেস নিজের পরিচয়ই দিয়েছে। অর্থাৎ আবারও হাত শিবিরের বিরুদ্ধে হিন্দুবিরোধী তোপ উগরে দিয়েছেন তিনি। এখানেই শেষ নেয়, রামের সঙ্গে শিবের তুলনাও যে চলে না সে কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন আদিত্যনাথ। রামায়ণের প্রসঙ্গ টেনে মনে করিয়ে দিয়েছেন, স্বয়ং রাম যুদ্ধের আগে শিবপুজো করেছিলেন। তাঁর দাবি, রাম এবং শিব একে অন্যের পরিপূরক। কাজেই রামের পালটা শিবকে হাতিয়ার করতে গিয়ে খাড়গে যে নিজেদেরই বিপদই ডেকেছেন তা বলাই যায়। এর আগে একইভাবে রাহুলের করা মন্তব্যের জেরে জোর বিতর্ক হয়েছিল। হাত শিবিরের অন্যান্য নেতারাও বিতর্কে জড়িয়েছেন বার বার। কখনও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মন্তব্য কখনও অন্য কিছু। সবমিলিয়ে নিশানায় থেকেছে সেই কংগ্রেস। চলতি নির্বাচনে এ যেন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক তরজা একরকম, সেখানে মূলত দল এবং সমর্থকদের আবেগ জড়িয়ে থাকে। কিন্তু ধর্ম নিয়ে কোনও বিতর্ক হলে তাতে জড়িয়ে পড়েন আমজনতাও। ভোটের আবহে যখন যব নেতারাই জনতা জনার্দনকে তোয়াজ করতে ব্যস্ত, সেখানে এই ধরনের বিতর্ক কংগ্রেসের জন্য খুব একটা ভালো হবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।