‘আদিপুরুষ’ বিতর্কের জল গড়াল আদালতে। এবার এলাহাবাদ হাই কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে সিনেমার নির্মাতারা। সরাসরি ধর্মের প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘কোরান নিয়ে এমন সিনেমা তৈরি হলে ঠিক কী পরিণতি হত?’ সিনেমাটির একাধিক দৃশ্য ও সংলাপ হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলেই মত আদালতের। আর কী বলেছেন বিচারপতিরা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘আদিপুরুষ’ নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। সিনেমায় দেখানো সীতার জন্মস্থান থেকে আরম্ভ করে হনুমানের সংলাপ, একাধিক ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়েছে এই সিনেমা। ঘটনার জল গড়িয়েছে আদালতেও। সেখানেই এবার বিচারকদের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে সিনেমার নির্মাতারা। সরাসরি ধর্মের প্রসঙ্গ টেনেই নির্মাতাদের রীতিমতো তুলোধোনা করল এলাহাবাদ হাই কোর্ট।
আরও শুনুন: ‘হিন্দু দেওয়ানি বিধি’ চালুর উদ্যোগ নিচ্ছেন মোদি! মুসলিমদের হয়ে পালটা সওয়াল ওয়েইসির
আদালতে একাধিক ইস্যুতে ‘আদিপুরুষ’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। সেইসব থেকেই আদালতের পর্যবেক্ষণ, সিনেমাটি হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে। বিশেষত যাঁরা রামায়ণকে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখেন তাঁদের কাছে এই সিনেমা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই ইস্যুতে মন্তব্য রাখতে গিয়ে বিচারপতি অবশ্য এ কথা প্রথমেই স্পষ্ট করে দেন যে, আদালত কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের জন্য নয়। তেমনই কোনও ধর্মীয় বিষয়কে অবমাননা করা হচ্ছে, এমন ঘটনাও আদালত সমর্থন করে না। এরপরই বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘যদি কোরান নিয়ে এমন তথ্য বিকৃত করে সিনেমা তৈরি হত, তাহলে তার পরিণতি কী হত?’ সেইসঙ্গে এমন ভুল তথ্য সিনেমায় কী করে দেখানো হল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। এ বিষয়ে সেন্সর বোর্ডকেও একহাত নিয়েছেন বিচারপতি। আপত্তিকর সংলাপ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে সিনেমাটি মুক্তি পেল, তা সরাসরি জানতে চেয়েছে আদালত। নির্মাতারা যদিও জানান যে আপত্তিকর অংশগুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেই উত্তরে আদৌ সন্তুষ্ট হননি বিচারপতি।
আরও শুনুন: দলিত বলে জগন্নাথের সামনে যেতে পারেননি রাষ্ট্রপতি! দাবি নেটদুনিয়ার, সত্যিটা কী?
সিনেমাটি রিলিজের সময় এর সহ-কাহিনিকার দাবি করেছিলেন, তিনি নাকি জুতো খুলে ডায়লগ লিখতেন। কিন্তু সিনেমায় সেই ভক্তির এতটুকু ছাপ ফুটে ওঠেনি বলেই পালটা কটাক্ষ করেছেন অনেকেই। আর এবার সহ-কাহিনিকার মনোজ মুনতাসির শুক্লাকে সরাসরি এই মামলায় পার্টি করার নির্দেশ দিল আদালত। নির্দেশ, এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে আদালতে বক্তব্য জানাতে হবে। আদালত কক্ষে বিচারপতি রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, “এ ক্ষেত্রেও আমরা যদি চোখ বুজে থাকি তাহলে কাল না জানি কি দেখতে হবে!” হিন্দুদের সহিষ্ণুতার যেন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, এমনটাই সাফ বলেছেন বিচারপতি। এমনকি এই ধরনের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া আদালতের কাজ নয় বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারকে ভেবে দেখার দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।