ক্রমেই খারাপ হচ্ছে দেশের অর্থনীতির হাল। শুধু দেশ বলে নয়, অতিমারির পর থেকেই সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি। তার মধ্যে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। এই আবহে স্থিতাবস্থা ফিরুক বিশ্ব অর্থনীতিতে। ফিরুক শান্তি। এই কামনায় সপ্তাহব্যাপী মহা কুবের-যজ্ঞের আয়োজন কেরলে। কেন হচ্ছে কুবেরের আরাধনা? আসুন, শুনে নিই।
বিশ্ব অর্থনীতি যে সংকটে পড়েছে, তা থেকে মুক্তি মিলবে কোন পথে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন তাবড় অর্থনীতিবিদরা। তবে এর একটা সহজ সমাধান বের করেছেন দেশের পুরোহিতরা। পুরাণ অনুযায়ী কুবের হলেন ধন ও ঐশ্বর্যের দেবতা। তিনি খুশি থাকলেই মিটতে পারে সকলের সমস্ত অভাব ও অনটন। অতএব সেই কুবেরেরই আরাধনার আয়োজন কেরলের পালাক্কড়ে। আয়োজন বলতে চলছে এক মহাযজ্ঞ। আর সেখানে কামনা একটাই, কুবের দেবতা যেন দেশ ও বিশ্বের অর্থনীতির হাল ফিরিয়ে দেন। শান্তি আনেন পৃথিবীতে।
আরও শুনুন: সাম্প্রদায়িক অশান্তির জেরে শ্রীলঙ্কার থেকেও বেহাল হতে পারে দেশের অর্থনীতি, আশঙ্কা সঞ্জয়ের
মহা সমারোহেই চলছে মহা কুবের-যজ্ঞ। পালাক্কড়ের চালাভারা এলাকার কুবেরপুরী গ্রাম। সেখানে রয়েছে কুবের দেবের বিরাট একটি মন্দির। সেখানেই চলছে সপ্তাহব্যাপী ওই যজ্ঞানুষ্ঠানের। গত সাতশো বছরে এমন যজ্ঞ নাকি আর একটাও হয়নি। ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে সেই যজ্ঞ। সেদিন মন্দিরে উপস্থিত ছিলেন কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান-সহ আরও মান্য-গণ্যরা। যজ্ঞ চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। রীতিমতো নিয়মনীতি আচার মেনে চলছে অনুষ্ঠান। বিশ্ব অর্থনীতির হাল ফেরাতে পুজো বলে কথা। একটুও ভুলচুক হলে চলবে কেন! ওই যজ্ঞানুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন কেরলের প্রায় একশোটি মন্দিরের পুরোহিত। মন্দিরে এসে এই মহাকুবের যজ্ঞে অংশ তো নিতেই পারেন ভক্তরা, তবে চাইলে অনলাইনেও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
কেরলকে বলা হয় ঈশ্বরের নিজস্ব দেশ। ২০২১ সালের নভেম্বরে ওই মন্দিরটির উদ্বোধন করা হয়। কুবেরের পাশাপাশি সেখানে পূজিত হন লক্ষ্মী-বিনায়ক, দেবী মহালক্ষ্মী। আছেন কৃষ্ণও, যিনি কেরলে রাজাগোপালা নামেই বেশি পরিচিত। কুবের তো বটেই, এই তিন দেবতারও কিন্তু সরাসরি যোগ রয়েছে অর্থসম্পদের সঙ্গেই। শোনা যায়, দেশের অর্থনীতির মঙ্গলকামনাতেই খোলা হয়েছিল এই মন্দির। প্রতিদিন এই মন্দির দর্শন করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য ভক্ত।
আরও শুনুন: ১১ কোটি টাকার কয়েন গায়েব SBI থেকে, উদ্ধারে তদন্তে নামল CBI
আমাদের দেশে যজ্ঞ এক প্রাচীন ঐতিহ্য। রাজ্যের শান্তি বা মঙ্গলকামনায় যজ্ঞের কথা তো কম লেখা নেই ধর্ম-সংক্রান্ত বইপত্রে। সময় বদলেছে। তবে এখনও সেই ঐতিহ্য বহমান। প্রকৃতির মার এসে যখন মানবসভ্যতাকে নানা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তখন ভরসা সেই ঈশ্বরই। তা ঈশ্বরের আপন দেশে এমন রাজসূয় যজ্ঞের ফল নিশ্চিত মিলবে হাতেনাতে। অচিরেই ফিরবে বিশ্ব অর্থনীতির হাল। আপাতত সেই প্রার্থনাতেই দিনরাত এক করে যজ্ঞে মগ্ন পালাক্কড় গ্রামের ভক্তবৃন্দ।