দেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক অশান্তির আবহে ফের উসকে উঠল নয়া বিতর্ক। এবার শপিং মলের ভিতরে নমাজ পড়ার অভিযোগে শুরু হল শোরগোল। দায়ের হল এফআইআরও। কোথায় ঘটছে এমন ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
লাউডস্পিকার বিতর্কে দিনকয়েক আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ। বিশেষত মুসলিম ধর্মস্থানগুলিতে লাউডস্পিকার ব্যবহারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল একাধিক হিন্দুত্ববাদী দল। এর পালটা হিসেবে হনুমান চালিশা পড়ার হুমকিও দেয় তারা। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যের বিভিন্ন মসজিদ থেকে রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয় লাউডস্পিকারও। অশান্তি যেন লেগেই রয়েছে। জ্ঞানবাপী-সহ একাধিক মসজিদের ভিতরে হিন্দু ধর্মের নিদর্শন খুঁজতে উঠেপড়ে লেগেছিল হিন্দুত্ববাদী দলগুলি। সে নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। এর মধ্যেই বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার হজরত মহম্মদকে কেন্দ্র করে বিতর্কিত মন্তব্য সেই আগুনে ঘি ঢালে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় বিক্ষোভ-অবরোধ। হিংসা পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছিল বেশ কয়েকটি জায়গায়। এই অশান্তির আবহেই ফের উসকে উঠল নয়া বিতর্ক। উত্তরপ্রদেশের একটি মলের ভিতরে নমাজ পড়া নিয়ে এবার শুরু হল হুলস্থুল। এমনকি বিষয়টি নিয়ে মামলা পর্যন্ত দায়ের হয়েছে।
আরও শুনুন: পঁচিশ বছরের আত্মীয়তা, হিন্দু কর্মচারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম পরিবারই
ঘটনাটি ঘটেছে লখনউয়ের লুলু মলে। ইউসুফ আলি নামে আবু ধাবির এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনকুবেরের উদ্যোগে সম্প্রতি সেখানে গড়ে উঠেছে মলটি। গত রবিবার সেটির উদ্বোধন হয়। তবে খুলতে না খুলতেই নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল লুলু গ্রুপের ওই মলটি।
জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার মলের ভিতরে নমাজ পড়েছিলেন কয়েক জন ব্যক্তি। আর সেই নমাজ পাঠের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার পর থেকেই শুরু হয়েছে হইচই। অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা-সহ বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী দলের ক্ষোভের মুখে পড়েন মল কর্তৃপক্ষ। এমনকি মলের মূল ফটক আগলে বিক্ষোভও দেখায় তারা। মল কর্তৃপক্ষের কাছে হনুমান চালিশা পাঠের অনুমতি চেয়েও সরব হয়েছে তারা। এই মর্মে শুক্রবার রাখা হয়েছিল একটি কর্মসূচিও। অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার জাতীয় মুখপাত্র শিশির চতুর্বেদী জানান, “শুধুমাত্র একটি বিশেষ ধর্মাবলম্বীকেই প্রার্থনার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে মলের ভিতরে। যা অন্যায়। হিন্দু এবং অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও মলের ভিতরে প্রার্থনার সুযোগ পাওয়া উচিত।” এর পরেই হনুমান চালিশা পাঠের দাবি জানান তাঁরা। মল কর্তৃপক্ষ অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার সদস্যদের মলের ভিতর ঢুকতে দেননি বলেও অভিযোগ তুলেছেন শিশির।
আরও শুনুন: বিদ্বেষ আবহে রাজস্থানে বিপর্যস্ত পর্যটন, প্রভাব পড়েছে ইদের বাজারেও
বিতর্ক বাড়তেই প্রমাদ গোনেন মল কর্তৃপক্ষ। তড়িঘড়ি মলের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, সব ধর্মের প্রতি সম্মান থাকলেও কোনও ধর্মীয় প্রার্থনা বা অনুষ্ঠান ওই মলের ভিতরে করা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে সুশান্ত গল্ফ সিটি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন মলের পাবলিক রিলেশনস ম্যানেজার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই নমাজ পড়ায় অভিযুক্ত অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে লখনউ পুলিশ। ভাইরাল হওয়া ভিডিও খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের শনাক্তকরণের চেষ্টা চলছে। ফের এই ঘটনা নিয়ে নতুন করে উসকে উঠেছে বিতর্ক। এমনিতেই বিদ্বেষ-হাওয়া বইছে গোটা দেশ জুড়ে। এই পরিস্থিতিতে নমাজ-বিতর্ককে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না ওয়াকিবহাল মহল।