ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে সরব হয়েছিলেন তিনি। অথচ সেই তিনিই নাকি এখন সওয়াল করছেন যৌন হেনস্তায় অভিযুক্তের পক্ষে। হ্যাঁ, নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডের দাপুটে সরকারি কৌঁসুলি এবার যাঁর হয়ে মামলা লড়তে নেমেছেন, তিনি মহিলা কুস্তিগিরদের হেনস্তার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ শরণ সিং। কে এই আইনজীবী? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একাধিক মহিলা কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্তা করেছেন জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিং, এই অভিযোগে সরব দেশের একাধিক পদকজয়ী কুস্তিগির। যে অভিযোগের জল গড়িয়েছে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত। অভিযুক্ত কুস্তিকর্তা বিজেপি সাংসদও বটে, ফলে এই ইস্যুতে আঙুল উঠেছে কেন্দ্র সরকারের দিকেও। তারপরেও সাক্ষী-বিনেশ-সঙ্গীতাদের সুবিচার পাওয়ার আশা এখনও বিশ বাঁও জলে। এই পরিস্থিতিতেই অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের পক্ষে দাঁড়িয়ে সওয়াল করতে দেখা গেল এমন এক আইনজীবীকে, আদালত-মহলে যিনি দুঁদে কৌঁসুলি বলেই পরিচিত। পুলিশের চার্জশিটের প্রেক্ষিতে আদালতের পাঠানো সমন মেনে হাজিরা দিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ। আর তাঁর হয়েই দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে সওয়াল করে দু’দিনের অন্তর্বর্তী জামিন আদায় করে নিলেন প্রখ্যাত আইনজীবী রাজীব মোহন। ঘটনা হল, ২০১২ সালের নির্ভয়া-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত ধর্ষকদের ফাঁসির দাবিতে আদালতে সওয়াল করেছিলেন এই আইনজীবীই। সেদিনের ঘটনা দেশ জুড়ে যেমন তোলপাড় ফেলেছিল, সাম্প্রতিক কালে যৌন হেনস্তার সুবিচার চেয়ে কুস্তিগিরদের আন্দোলনটিও দেশের প্রেক্ষিতে তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই কারণেই, নির্ভয়া কাণ্ডে নির্যাতিতার হয়ে কথা বলা আইনজীবীকে এবার হেনস্তায় অভিযুক্তের পক্ষে সওয়াল করতে দেখে অবাক অনেকেই।
আরও শুনুন: এ কোন ‘অমৃতকাল’! সাক্ষী-ভিনেশরা মাটিতে পড়ে, মাটিতে মিশল দেশের সম্মানও
আইনজীবী মহলে দক্ষ হিসাবেই পরিচিত সরকারি কৌঁসুলি রাজীব মোহন। বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদী ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। সেই ব্যক্তিই মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের হয়ে মামলা লড়েন কী করে? প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। নির্ভয়া-কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত চার ব্যক্তির ফাঁসির সাজার জন্য আদালতে জোরালো দাবি জানিয়েছিলেন এই রাজীবই। শেষমেশ ২০২০ সালের মার্চ মাসে ওই ব্যক্তিদের ফাঁসির সাজা শোনায় আদালত। নির্ভয়ার মা আশা দেবী নিজেও প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের সপক্ষে মুখ খুলেছেন। দাবি তুলেছেন উপযুক্ত তদন্ত এবং সুবিচারের। এই পরিস্থিতিতে রাজীব মোহনকে ব্রিজভূষণের পক্ষে দেখে আদৌ সন্তুষ্ট হতে পারছেন না অনেকেই। যদিও পেশাদার আইনজীবী হিসেবে এই কাজ অস্বাভাবিক নয় বলেই মনে করছে আইনজীবী মহল। তবে আইনি নীতির বাইরেও, মানবিকতার নিজস্ব নীতি নৈতিকতা তো থাকেই। আর সেই দৃষ্টি থেকেই এই বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছেন না বিনেশ-সাক্ষীদের সমর্থকেরা।