তাঁদের পরিচয়, তাঁরা শহিদের আত্মীয়। একদিকে সেই যন্ত্রণা, অন্যদিকে শহিদের স্বজন হওয়ার গর্ব- এই দুই-ই বোধহয় মিলিয়ে দিয়েছে দুই প্রজন্মকে। পোশাকে জ্বলজ্বল করছে স্বীকৃতির পদক, সেই নিয়েই কথা হচ্ছিল ল্যান্সনায়েক সন্দীপ সিংহের একরত্তি ছেলের সঙ্গে মেজর অনুজ সুদের স্ত্রীর। সেই কথোপকথন আবেগতাড়িত করল গোটা নেটদুনিয়াকে। কী কথা বলছিলেন তাঁরা? শুনে নিন।
দেশের জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন দুজনেই। তাঁদের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দিতে ভারত সরকারের তরফে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে শৌর্য চক্র। সেই মেডেল জ্বলজ্বল করছিল সেদিন দুজনের পোশাকেই। একজন মেজর অনুজ সুদের স্ত্রী, অন্যজন ল্যান্সনায়েক সন্দীপ সিংহের ছেলে। একজন হারিয়েছেন স্বামীকে, অন্যজন বাবাকে। দিল্লিতে ন্যাশনাল ওয়ার মেমরিয়ালের সামনে দেখা হয়ে গিয়েছিল দুজনের।
একই রকম মেডেল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিল সন্দীপ সিংহের ছেলে। এখনও ছোট সে। যুদ্ধ-মৃত্যু-পদক কোনওটাই তেমন করে বোঝার বয়স হয়নি তার। তবু একই রকম পদক দুজনের কাছে দেখে কৌতূহল চেপে রাখতে পারেনি খুদে। জিজ্ঞেস করেছিল, ‘দুটো কি একই!’। শান্ত ভাবে খুদের সে প্রশ্নের উত্তর দেন অনুজের স্ত্রী আকৃতি। সেই কথোপকথন ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, যা আবেগপ্রবণ করে তুলেছে দেশবাসীকে।
আরও শুনুন: মাথা জুড়ে সার্জারির দাগ, চুল কামানো… একরত্তি মেয়েকে সঙ্গ দিতে মাথা কামালেন বাবাও
কাশ্মীরের হান্দওয়ারা জেলায় জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারান মেজর অনুজ শর্মা। তাঁর সাহসিকতার স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁর স্ত্রী আকৃতির হাতে শৌর্য চক্র তুলে দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। মাত্র কয়েক মাস আগেই অনুজের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আকৃতির। দাম্পত্য জীবন মাত্র কটাদিনেরই। তার মধ্যেই ঘরে ফেরেন কফিনবন্দি অনুজ। গত বছর শৌর্য চক্র গ্রহণ করার সময় আকৃতির সেই শোকবিহ্বল অথচ দৃঢ় মুখ দেখে চোখ ভিজেছিল দেশবাসীদের।
ল্যান্সনায়েক সন্দীপ সিংহের জীবনের গল্পটাও এর থেকে কিছু আলাদা নয়। জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযানে গিয়ে শহিদ হন সন্দীপ। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সার্জিকাল স্ট্রাইকেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পরিবারের হাতেও শৌর্য চক্র তুলে দিয়েছে ভারত সরকার।
আরও শুনুন: ভারতীয় সেনার বীরগাথা উঠে আসুক সিনেমায়, চাইতেন বিপিন রাওয়াত
আকৃতির পোশাকে সেদিন আরও কয়েকটি মেডেল ছিল। যা দেখে বেশ অবাকই হয়ে গিয়েছিল ল্যান্সনায়েক সন্দীপ সিংহের একরত্তি ছেলেটি। জিজ্ঞেস করে বসে, কোনটা নতুন আর কোনটা পুরনো? বেশ ধৈর্য ধরেই সে সবের উত্তর দেন আকৃতি। তাকে বুঝিয়ে বলেন কোনটা কোন সময়ের স্মারক।
দুই প্রজন্মের দুজন মানুষ। যুদ্ধক্ষেত্রে দুজনেই হারিয়েছেন কাছের মানুষকে। দুজনের কথাতেই সেদিন প্রচ্ছন্ন ছিল শহিদের আত্মীয় হওয়ার সেই গর্ববোধ। যা বোধহয় সেই যন্ত্রণার সঙ্গে লড়তে মনের জোর দেয় দুজনকেই। তাঁদের এই কথোপকথন শুনে আবেগতাড়িত দেশবাসীও ।