একটি পা কার্যত অক্ষম। অগত্যা ভরসা ক্রাচ। তবে নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি তিনি। বরং আত্মবিশ্বাসে ভর করে উপার্জনের পথ খুঁজে নিয়েছেন তিনি নিজেই। তাই এক পা নিয়েই লোকের বাড়ি ঘুরে ঘুরে খাবার ডেলিভারি করেন এই ব্যক্তি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মুখের হাসিটুকু মলিন হতে দেননি তিনি কোনওদিন। অদম্য মনের জোর নিয়ে প্রতিদিন লড়াই করে চলেছেন সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। আসুন শুনে নিই তাঁর সেই লড়াইয়ের গল্প।
কত সময়েই তো অনলাইনে খাবারদাবার অর্ডার করে থাকে আমরা। রাস্তার যানজট ঠেলে যে মানুষটা আমাদের হাতে পৌঁছে দেয় পছন্দের খাবারখানা, সেই মানুষটার দিকে হয়তো তাকিয়ে দেখাও হয় না ভালখানা। হাতে গরম খাবারখানা আমাদের মুখের সামনে তুলে ধরতে কত ঝুঁকিই না নিয়ে ফেলেন তাঁরা। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার মুখেও পড়েন তাঁরা আমাদের পরিষেবা দিতে গিয়ে। তবু সমস্ত বাধা বিপদের ভয় দূরে ঠেলে কর্তব্যে অচল থাকেন ডেলিভারির সঙ্গে এই যুক্ত মানুষগুলো। সম্প্রতি তেমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা রোহিত কুমার সিংয়ের। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি ভাগ করে নিয়েছেন সেই গল্প।
আরও শুনুন: জ্ঞানের পথে বাধা নয় ধর্ম, রামায়ণ নিয়ে কুইজে সেরার খেতাব দুই মুসলিম পড়ুয়ার
সম্প্রতি একটি অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থা থেকে খাবার অর্ডার করেছিলেন রোহিত। সংস্থার সাইটে নির্ধারিত সময় দেখিয়েছিল ৩০ মিনিট। তবে সেই সময় পেরিয়ে গেলেও খাবার এসে পৌঁছয়নি তাঁর বাড়িতে। স্বভাবতই খানিকটা ধৈর্য হারান রোহিত। সাইটে দেওয়া নম্বর থেকে ডেলিভারি এজেন্টটিকে ফোনও করে ফেলেন তিনি। ওপার থেকে শান্ত গলায় জানানো হয়, আরও কিছুক্ষণ সময় লাগবে। লেগেওছিল সময়। বেশ কিছুক্ষণ পরে বেজে ওঠে দরজার ঘণ্টি। একটু রেগেমেগেই দরজা খুলেছিলেন রোহিত। ভেবেছিলেন আজ দু-চার কথা শোনাবেনই। তবে দরজা খুলে তিনি যা দেখলেন, তাতে আর তার মুখে কথা সরল না। খাবার পরিবাহক হিসেবে যিনি এসেছেন, তাঁর বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। একটি পা অক্ষম। কোনও মতে ক্রাচে ভর দিয়ে নিজের কাজ করে চলেছেন ওই ব্যক্তি। যা দেখে যারপরনাই অবাক হয়ে যান রোহিত।
আরও শুনুন: দেশপ্রেমের বার্তা দিতে অভিনব উদ্যোগ, চোখের মধ্যে জাতীয় পতাকা আঁকলেন ব্যক্তি
সম্প্রতি সেই ব্যক্তির গল্পই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে নেন রোহিত। জিজ্ঞেস করে রোহিত জানতে পারেন, বছর চল্লিশের ওই ব্যক্তির নাম কৃষ্ণাপ্পা রাঠোড। আগে কাজ করতেন স্থানীয় একটি ক্যাফে-তে। তবে লকডাউনের সময় চাকরি খোয়ান কৃষ্ণাপ্পা। পেট চালাতে যোগ দেন এই ফুড ডেলিভারি সংস্থায়। বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাবারদাবার ডেলিভারির কাজ। শারীরিক ওই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সহজ ছিল না মোটেই। কিন্তু পরিবারের মুখ চেয়ে সেই কষ্টকেই হাসি মুখে বরণ করেছেন তিনি। তিন সন্তানকে বড় করে তোলার গুরুদায়িত্ব পালন করতে দিনরাত পরিশ্রম করেন কৃষ্ণাপ্পা। কোন সকালে বেরিয়ে পড়েন কাজে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে গভীর রাত। ছেলেমেয়েদের ভালো স্কুলে পড়িয়ে মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে চান তিনি। তার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলেন রোজ রোজ। তবে এত কষ্ট সত্ত্বেও ঠোঁটের আগায় লেগে থাকে ওই হালকা হাসিটুকু। কোনও প্রতিকূলতাই যাকে ম্লান করতে পারে না কোনওমতে। কৃষ্ণাপ্পার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যের আবেদন জানাতেও ভোলেননি রোহিত। ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাঁর সেই পোস্ট। কৃষ্ণাপ্পার অদম্য মনের জোরকে সেখানে কুর্নিশ জানিয়েছেন অনেকেই।