রাজনীতির ময়দানে প্রথমবারেই বাজিমাত করেলেন বিনেশ। জিতলেন বিপুল ভোটে। অথচ তাঁর এই জয় আরও মহান করল কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ সিং-কে। বিজেপি নেতার দাবি অন্তত তেমনটাই। কিন্তু কেন এমন দাবি করছেন ব্রিজভূষণ? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
প্যারিস অলিম্পিকে পদক আসেনি। কিন্তু বিনেশ তো হারতে শেখেননি। মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার। হরিয়ানার নির্বাচনেও সেই ধারা বজায় রাখলেন। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়ে ছিনিয়ে নিলেন জয়। উচ্ছ্বাসে ভাসল হরিয়ানার গ্রাম। কিন্তু এই আবহেও বিনেশকে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না প্রাক্তন ফেডারেশন সভাপতি ব্রিজভূষণ সিং। তাঁর দাবি, বিনেশের এই জয় আরও মহান করল তাঁকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনটা বললেন বিজেপি নেতা?
হরিয়ানার নির্বাচনের সামগ্রিকভাবে পাল্লাভারী বিজেপির। তবে কংগ্রেসের টিকিটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন বিনেশ ফোগট। পরিবার তো বটেই, বিনেশের জয়ে উচ্ছ্বসিত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। জয়ের আনন্দে ভাসছে তাঁর গ্রামের বাসিন্দারা। আসলে, অলিম্পিকে বিনেশের স্বপ্নভঙ্গ মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। যে লড়াই বিনেশ দেখিয়েছেন তারপর খালি হাতে ফেরা মানায় না। তবু নিয়তীকে অস্বীকারের উপায় নেই। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের উপর হওয়া সমস্ত চক্রান্ত সহ্য করেছেন বিনেশ। জবাবও দিয়েছেন নিজের মতো করেই। যে বিনেশের অলিম্পিকের হার নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন বিজেপির একাংশ, সেই বিনেশই বিজেপি প্রার্থী বিপুল ব্যবধানে হারিয়েছেন। নিজের জয় দেশের সেই সমস্ত মহিলাদের উৎসর্গ করেছেন বিনেশ, যারা প্রতিনিয়ত লড়াই করে টিকে রয়েছেন। কোনও না কোনও বিষয়ে নিজের মতো করে লড়াই জারি রেখেছেন। নিজের সঙ্গে এদের তুলনা টেনেছেন কুস্তিগির। নিজের লড়াইয়ের কথাও মনে করিয়েছেন বিনেশ। আর সেই প্রসঙ্গ করেই চরম কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতা তথা কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ সিং। দাবি, বিনেশের জয় তাঁকে আরও মহান করে তুলল। বিজেপি নেতার ইঙ্গিত, তাঁর নাম ব্যবহার করে প্রচার চালিয়েই ভোটে জিতেছেন বিনেশ। শুধু তাই নয়, এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে হরিয়ানায় কংগ্রেসের ভরাডুবি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন ব্রিজভূষণ।
আসলে, বিজেপির সঙ্গে বিনেশের ‘শত্রুতা’ নতুন নয়। কুস্তি ফেডারেশনের তৎকালীন প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিনেশ। তার জন্য রাজপথে মার অবধি খেতে হয়েছে কুস্তিগিরকে। শুধু তাই নয়, প্যারিস অলিম্পিকে নিজের বিভাগে লড়তে পারেননি দেশের অন্যতম সেরা মহিলা কুস্তিগির। মনে করা হয়, কুস্তি ফেডারেশনের জন্যই এমন অসুবিধার মুখে পড়েছিলেন বিনেশ। তবু পিছিয়ে আসেননি। ওজন কমিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। তাতে অবশ্য শেষমেশ তীরে এসে তরী ডোবে। ফাইনালে ওজন বেড়ে জেতা পদক হাতছাড়া হয়। অলিম্পিকে স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা বুকে নিয়েই কুস্তি থেকে অবসর নেন বিনেশ। তবে লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। কংগ্রেসে যোগ দিয়ে হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেন। জুলানা কেন্দ্র থেকে তাঁকে টিকিট দেয় হাত শিবির। দলকে হতাশ করেননি বিনেশ। ৬০১৫ ভোটে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছেন কুস্তিগির। এই আবহেও তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না ব্রিজভষণ।