খাওয়া শেষ। এবার টাকা দেওয়ার পালা। পকেটে ক্যাশ নেই। ভরসা অনলাইন। এদিকে ইউপিআই পেমেন্ট ফেইলড! একবার নয়, বারবার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই পড়েছেন। ইদানীং বড্ড বেশি পড়ছেন। কিন্তু কেন? দেশজুড়ে বারবার এমন ইউপিআই সারভার ডাউনের নেপথ্যে কী?
কথায় বলে, ‘ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়।’ যতই ভয়ঙ্কর হোক, সত্যি হবেই। এই ভয়ে কতশত ভোরের ঘুম জলে গিয়েছে। স্বপ্নে দেখা দিয়েছে অঙ্ক খাতা। উপরে জ্বলজ্বল করছে, একশোয় শূণ্য। যত বড়ই অঙ্কবিদ হোক, এমন স্বপ্ন দেখলে বুক দূরদূর করবেই। বড়বেলায় অঙ্কে ফেল করার ভয় নেই। কিন্তু ইউপিআই পেমেন্ট ফেল করলে?
একবার নয়, বহুবার এমন সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ইদানীং বড্ড বেশিই হচ্ছে। তার জন্য কোথায় গিইয়ে দায়ী অতিরিক্ত ডিজিটাল নির্ভর জীবন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লেনদেনের ধরন বদলেছে বহুদিন। খুচরোর সমস্যাকে প্রায় তুড়ি মেরে উড়িয়েছে অনলাইন পেমেন্ট। সুবিধা যে হয়েছে তা অস্বীকারের উপায় নেই। কিন্তু অসুবিধাও বিস্তর। কিছুদিন আগে অবধি স্রেফ বড় বড় দোকানে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা মিলত। তাও নির্দিষ্ট অঙ্কের লেনদেন করলে তবেই। এখন সেসবের বালাই নেই! ১০ টাকার ঝালমুড়ি, ২০ টাকার চিপস, এমনকি ৩ টাকার চকোলেটও অনলাইনে টাকা পাটিয়ে কেনা যায়। প্রয়োজন স্রেফ একটা স্মার্টফোন। একাধিক অনলাইন পেমেন্ট অ্যাপ রয়েছে। তাতে স্ক্যান করলেই কাজ শেষ। পকেটে হাত ঢুকিয়ে মানিব্যাগ থেকে টাকা বার করার ঝামেলা নেই। চাইলেই ক্যাশলেস অবস্থায় হিল্লিদিল্লি ঘুরে আসা যায়। কিন্তু এখানে একটা সমস্যা আছে। বড় সমস্যা। তা হল, পেমেন্ট ফেইলড। কখন, কোথায়, কীভাবে পেমেন্ট ফেল করবে তা বোঝা মুশকিল। আর একবার এমনটা হলে, লজ্জার একশেষ। চেনা দোকান হলে তাও ম্যানেজ করা সম্ভব। কিন্তু অচেনা দোকানি ছাড়বেন কেন? রেস্তোরাঁয় এমন পরিস্থিতি হলে, মনে মনে বাসন মাজার প্রস্তুতি নিইয়ে ফেলেন অনেকে। বাস্তবে এই অভিজ্ঞতা কারও হয়নি, এমনটা জোর গলায় বলাও যাবে না। বিপদ স্রেফ এইটুকু নয়। এমনটাও হতে পারে যে, ক্রেতার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে গেল। কিন্তু বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে তা ঢুকল না। তাতে সমস্যা দুজনেরই। অনেকসময় ব্যাঙ্কে অবধি ছুটতে হয়, টাকার সমস্যা মেটাতে।
প্রযুক্তি থাকলে তাতে সমস্যা হবেই। এক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তেমনই। কিন্তু সমস্যা যদি রোজ হয়? তাহলে তো প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। ইদানীং দিনের একটা সময় এই সমস্যা হচ্ছেই। কখনও তা কয়েক ঘণ্টা থাকছে, কখনও আরও বেশি। ব্যাঙ্কের তরফে সমস্যার কথা আগাম ঘোষণা করছে। কখনও তাও হচ্ছে না। আর তাতেই নাকাল হচ্ছে সাধারন মানুষ। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এত বেশি সমস্যা? ব্যাঙ্কের দাবি, অতিরিক্ত লেনদেন যাবতীয় সমস্যার মূলে। প্রতি মাসে ইউপিআই ব্যবহারকারীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। যদিও ডিজিটাল ভারত কর্মসূচিতে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে সকলেই যে সঠিক কাজে ইউপিআই ব্যবহার করছেন তা নয়। বেশিরভাগই ভুয়ো বা লোক ঠকানোর ব্যবসা চালাচ্ছে। বিনামূল্যে অনলাইন লেনদেনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে শয়ে শয়ে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে এইসব অসাধু লোকজন। পাশাপাশি মাত্রাতিরিক্ত ইউপিআই ব্যবহারে সারভার ফেল করছে ঘনঘন। সমস্যা মোকাবিলায় চেষ্টার খামতি রাখছেন না প্রশাসনের কেউ। তবু এত বড় দেশে কে কোথায় কীভাবে লোক ঠকানোর কাজে নেমে পড়ছে, তা প্রথমেই শনাক্ত করা কঠিন। বয়স্করা মূলত এদের টার্গেট। ডিজিটাল পেমেন্ট সম্পর্কে তাঁদের ধারণা কম। কাজেই ফাঁকা হচ্ছে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। সেক্ষেত্রে একবারে যত বেশি টাকা অন্যত্র ট্রান্সফার করা সম্ভব, তা করছে ওই দুষ্কৃতিরা। সমস্যায় শিকড় এখানেই।
তবে চাইলেও রাতারাতি এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। তাই ডিজিটাল নির্ভরশীলতা থাকলেও, সঙ্গে কিছুটা ক্যাশ রাখার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্তত বেশি খরচ হতে পারে, এমনটা জানা থাকলে অবশ্যই কিছুটা টাকা রাখতে হবে। তাতে সমস্যায় পড়লে কিছুটা ম্যানেজ দেওয়া যায় আর কি! পাশাপাশি চোখ-কান খোলা রাখতে হবে পেমেন্টের বিষয়ে। অসাবধানে কিছু করলে, বিপদ হতেই পারে। ভালো করে দেখে বুঝে তবেই পেমেন্ট করা নিরাপদ। অন্যথায়, পেমেন্ট ফেইলডের চাইতেও ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন চোখের সামনে ভেসে উঠতে পারে।