ঐতিহাসিক দিন। অর্থাৎ ইতিহাসে যার গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিবছর সেই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে দিনটিকে উদযাপন করা হয়। স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস সহ আরও কিছু বিশেষ দিন রয়েছে, যেগুলি পালন করা হয় রাষ্ট্রের স্বার্থে। কিন্তু এই তালিকায় বুদ্ধপূর্ণিমা থাকতে পারে? ইতিহাস বলছে অবশ্য পারে। ঠিক কেমন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
হিংসা নয়, শান্তি! বিশ্বজুড়ে এই বার্তাই ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন বুদ্ধ। তিনি একাধারে বৌদ্ধ ধর্মের প্রণেতা, আবার হিন্দুমতে শ্রীকৃষ্ণের অবতার। ধর্মপুরুষ, সেই অর্থে রাজনীতির সঙ্গে যোগ নেই। তবে ইতিহাস বলছে ভারতের রাজনীতিতে গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতি বছর বৈশাখ পূর্ণিমা দিনটিকে বুদ্ধজয়ন্তী হিসেবে পালন করা হয়। দিনটি বৌদ্ধদের কাছে তো বটেই, হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মূলত শাস্ত্রীয় কারণেই। তবে রাজনীতির দুনিয়াতেও এর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। তার প্রমাণ মিলবে বিশেষ কয়েকটি বছরের বুদ্ধপূর্ণিমার দিকে তাকালে। দেশজুড়ে উৎসবের পাশাপাশি এই দিনটিতে এমন কিছু হয়েছে যা ভারতের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। চলতি বছরটিও ব্যতিক্রম নয়। সদ্যই বুদ্ধপূর্ণিমা কেটেছে। দেশের রাজনীতিতে এইদিনে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ। ভারত-পাক অশান্তিকে সামনে রেখে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যা স্বাভাবিকভাবেই চর্চার অন্যতম বিষয় হয়ে উঠেছে। এদিন পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের বীভৎসতার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের সাম্প্রতিক অভিযান, অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে মোদি দাবি করেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদকে গুঁড়িয়ে দিয়ে জঙ্গিদের মনোবলও গুঁড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে। সর্বসমক্ষে তিনি জানান, ভারতের হামলায় সন্ত্রাসবাদের ‘হেড কোয়ার্টার’ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেনার কৃতিত্ব সম্পর্কেও বিশেষ মন্তব্য করেছেন মোদি। জানান, ভারতের স্কুল-কলেজ, সাধারণ নাগরিকের বাড়িঘর, মন্দির-গুরুদ্বারকে নিশানা করেছিল পাকিস্তান। যদিও ভারতীয় সেনা তা প্রতিহত করে। গোটা বিশ্ব এই কৃতিত্ব দেখেছে। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মোদি সামনে এনেছেন। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও ‘নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেল’ ভারত সহ্য করবে না। আর সন্ত্রাসবাদীদের চোখরাঙানি সহ্য করবে না ভারত। পাকিস্তানকে যদি বাঁচতে হয় ওদের সন্ত্রাসের পরিকাঠামো নির্মূল করতে হবে। সেনা এবং বিদেশ সচিবের মতোই মোদির বার্তা, পাকিস্তানের সঙ্গে কথা হলে এ বার পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই কথা হবে। আর এই সবকিছুই মোদি বলেছেন বুদ্ধপূর্ণিমার সন্ধ্যায়। তাই ধর্মের পাশাপাশি দিনটা গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে রাজনীতির ময়দানেও। তবে শুধু চলতি বছরে নয়, আগেও বুদ্ধপূর্ণিমার দিনটিকে বিশেষ কূটনৈতিক ঘোষণার জন্য বেছে নিয়েছেন প্রাক্তন প্রধান্মন্ত্রীরা। আর সে তালিকায় অটল বিহারী বাজপেয়ী, ইন্দিরা গান্ধী প্রমুখ রয়েছেন।
ফেরা যাক, ১৯৭৪ সালের বুদ্ধপূর্ণিমায়। দেশের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। গোটা বিশ্ব তাঁকে সমীহ করত বলা যায়। অনেকেই অবাক হতেন তাঁর কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত বা রাজনৈতিক পদক্ষেপ দেখে। তাঁর আমলে ভারত প্রথমবার পরমাণু শক্তির পরীক্ষা চালাল। পোখরানে হল গোপন পরীক্ষা। নাম দেওয়া হল, ‘স্মাইলিং বুদ্ধা’। ঠিক ধরেছেন, বিষয়টা বুদ্ধপূর্ণিমার দিনেই হয়েছিল। তাই এমন নাম। শুধুমাত্র দেশের সামরিক শক্তিবৃদ্ধি নয়, এর মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের ক্ষমতা সম্পর্কে বিশেষ বার্তা গিয়েছিল। তবে এখানেই শেষ নয়।
এই ঘটনার বছর ২৪ পরে আবারও এক বুদ্ধপূর্ণিমায় ঘটল বিশেষ কিছু ঘটনা। ১৯৯৮ সালে তখন প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন বাজপেয়ী। বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে তাঁর পরিচালনায় আবারও পরমাণু পরীক্ষা চলল। নাম দেওয়া হল, অপারেশন শক্তি। আরও একবার গোটা বিশ্ব তাকিয়ে দেখল ভারতের ক্ষমতা। মজার বিষয় এক্ষেত্রে বুদ্ধপূর্ণিমার দিনটিকে ইচ্ছা করেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। নেপথ্যে ছিল বিশেষ কারণ। এইদিনের পরমাণু পরীক্ষা আসলে পাকিস্তান ও চীনের প্রতি ভারতের বিশেষ বার্তা। বুদ্ধপূর্ণিমার দিনটিকে বেছে নেওয়ার কারণও তাই।
সুতরাং ইতিহাস সাক্ষী আছে বুদ্ধপূর্ণিমা ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ দিন। ভারত-পাক অশান্তির আবহে ভগবানের বুদ্ধের বাণী বিভিন্ন ভাবে চর্চায় ফিরেছে। সেই আবহে প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণের জন্য এই দিনটিকে বেছে নাওয়াও বিশেষ অর্থ বহন করছে বইকি।