শহিদের স্ত্রী, এটাই যেন তাঁর একমাত্র পরিচয়। তিনি সাজপোশাক নিয়ে কথা বলবেন কেন? এক ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে এই মর্মেই স্মৃতি সিং-কে বিঁধছে নেটদুনিয়ার একাংশ। কী ঘটেছে ঠিক? শুনে নেওয়া যাক।
বিয়ের পর চারটে মাসও কাটেনি, সিয়াচেন প্রাণ কেড়েছে তরুণ ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং-এর। সেই বীরত্বের সম্মানে সম্প্রতি তাঁর স্ত্রী স্মৃতির হাতে কীর্তিচক্র তুলে দেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আর তার পর থেকেই শহিদের প্রাপ্য তাঁর স্ত্রীর পাওয়া উচিত নাকি মা-বাবার, এই বিতর্ক উসকে দিয়েছে ক্যাপ্টেন সিং-এর পরিবার। তাঁদের অভিযোগ টেনে সোশাল মিডিয়ায় লাগাতার ট্রোলের মুখে পড়েছেন স্বামীহারা তরুণী। এবার ভুল করেও সেই ট্রোল পিছু ছাড়ল না তাঁর। এমনকি সেই আক্রমণে স্মৃতির সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন আরও এক তরুণী। পেশায় ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার সেই তরুণীকে স্মৃতি বলে ভুল করেই নতুন করে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানাল নেটদুনিয়ার একাংশ।
আরও শুনুন:
বিয়ের ৪ মাস পরেই সিয়াচেন প্রাণ কাড়ল জওয়ানের, কীর্তিচক্র আঁকড়েই সান্ত্বনা খুঁজছেন স্ত্রী
ঘটনার শুরু দিনকয়েক আগে থেকেই। যখন সেনাবাহিনীর ‘নেক্সট অফ কিন’ নিয়মে শহিদ জওয়ানের যা কিছু প্রাপ্য, তার অনেকটার উপরেই অধিকার বর্তায় তাঁর স্ত্রী স্মৃতির। কিন্তু মাত্র চার মাসের স্ত্রী কেন সেসব পাবেন, এই মর্মে প্রথম থেকেই সরব হন ক্যাপ্টেন সিং-এর মা-বাবা। যদিও তার আগে যে আট বছরের সম্পর্ক ছিল যুগলের, সে কথা মনে রাখছেন না কেউই। উলটে স্মৃতি অংশুমানের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের একটা বড় অংশ পেতেই অংশুমানের ভাইকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁকে। স্মৃতি সে প্রস্তাবে রাজি না হয়ে কেন বাড়ি ছেড়ে গিয়েছেন, তা নিয়ে প্রকাশ্য সংবাদমাধ্যমেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জওয়ানের বাবা। আর এই গোটা সময়টা জুড়েই নেটদুনিয়ায় নানাভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন স্বামীহারা তরুণী। এবার তাতে জুড়ল নয়া মাত্রা। শহিদের স্ত্রী হয়েও তিনি সাজপোশাকে মত্ত, এ নিয়েই কুরুচিকর আক্রমণে স্মৃতিকে বিঁধলেন নেটিজেনদের একাংশ। অথচ যার ছবি ঘিরে এই আক্রমণ চলছে, তিনি আদৌ স্মৃতি নন। জানা গিয়েছে, তিনি কেরলের জনপ্রিয় ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার রেশমা সেবাস্টিয়ান, বর্তমানে জার্মানির বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে তাঁর মুখের সঙ্গে স্মৃতির বেশ খানিক মিল রয়েছে। আর সেই সাদৃশ্যের সূত্র ধরেই স্মৃতিকে আক্রমণ করতে নেমে পড়েছেন অনেকেই। তাঁর ব্যক্তিগত ছবি এভাবে ব্যবহার করার জন্য রীতিমতো বিরক্ত ওই ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের সম্পূর্ণ পরিচয় স্পষ্ট করে দিয়ে এই ইস্যুতে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন:
নর্তকীর ছদ্মবেশে উদ্ধার করেন বন্দি সেনাকে, নেতাজিকেও প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন এই নারী গুপ্তচর
এই সমগ্র বিষয়টি বিরক্তি উদ্রেককারী তো বটেই। কিন্তু এ ঘটনা আরও এক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় আমাদের। যদি এক্ষেত্রে কোনও ভুল বোঝাবুঝি নাও ঘটত, তাহলেও কি শহিদের স্ত্রীকে সাজপোশাক নিয়ে কথা বলার জন্য ট্রোল করা ন্যায্য হত? প্রত্যেক মানুষের তো একটা নিজস্ব জীবন থাকে। একজন আরেকজনের সাপেক্ষে, আরেকজনকে কেন্দ্র করেই কেবল বাঁচবেন, তা কি হতে পারে? একজনের জীবন যদি দুর্ঘটনায় থেমে যায়, আরেকজনের জীবন দুঃখে থমকে দাঁড়ায় বইকি। কিন্তু অন্যেরা তাকে জোর করে সেখানেই থামিয়ে রাখবে, সে কাজও কি ন্যায্য? নারী বলেই, শহিদের স্ত্রী বলেই, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে উঁকিঝুঁকি দেওয়াও কি আদৌ সভ্যতা হতে পারে? এক্ষেত্রে হয়তো ভুল বোঝাবুঝি এবং রেশমা সেবাস্টিয়ান-এর আইনি হুঁশিয়ারির জন্য স্মৃতি আপাত রেহাই পেতে পারেন। কিন্তু তাঁর জীবনের জন্য এই প্রশ্নগুলো এবার শুরু হওয়াই জরুরি বলে মনে হয়।