পুণ্যের লোভে দুর্গম তীর্থে ছুট। অথচ সেই পুণ্য আদায়ের ভার বইছে কিছু অবোলা পশু। যার জেরে প্রাণও হারাচ্ছে তারা। চারধাম যাত্রার পুণ্যের হিসেবে তাও কি জমা হচ্ছে না কোথাও?
চারধাম যাত্রা শুরু হতে না হতেই দিনে ২০-৩০টি করে রোগী পাচ্ছেন এক চিকিৎসক। পথের পাশেই তাঁর ডিসপেন্সারি। তবে মানুষের নয়, পশুর চিকিৎসা করেন তিনি। তীর্থের পথে যান লক্ষ লক্ষ মানুষ, আর তাঁদের বহন করার জন্য, তাঁদের মালপত্র বয়ে নিয়ে যেতে যাতায়াত করে কয়েকশো ভারবাহী পশু, মূলত খচ্চর। তারা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বা জখম হলে, তাদের চিকিৎসা করাই কাজ ওই ডাক্তারের। আর তিনিই জানাচ্ছেন, পুরোদমে যাত্রা শুরু হলে দৈনিক রোগীর সংখ্যা গিয়ে পৌঁছয় ৬০-৭০এ। অথচ এই পশুরা যে নিজেদের দোষে কিংবা কোনও প্রাকৃতিক কারণে অসুস্থ হয়, তা কিন্তু নয়। তাদের এই অসুস্থতার জন্য দায়ী আসলে মানুষ। পুণ্যলোভী মানুষ, যাঁরা পুণ্য অর্জনের জন্যই এই দুর্গম পথে যাত্রার কথা ভাবেন, তাঁরা আসলে তো নিজেদের জোরে এ যাত্রা শেষ করেন না। তাঁদের পুণ্যের পথে পৌঁছনোর সব ভার বহন করতে হয় এই পশুদেরই, আর সেই ভারেই কখনও জখম হয় তারা, কখনও প্রাণও হারায়। চলতি বছরের যাত্রা শুরু হওয়ার প্রথম ২০ দিনেই যেমন প্রাণ হারিয়েছে ২০টি পশু। অথচ চারধাম যাত্রার সরকারি পরিসংখ্যান আর তীর্থযাত্রীদের পুণ্যের হিসেবের মাঝে তলিয়ে যায় এইসব সংখ্যা।
আরও শুনুন:
পুরীর মন্দিরের চার দরজা খোলার নির্দেশ বিজেপি সরকারের, কী গুরুত্ব এই চার দুয়ারের?
এই পশুদের অসুস্থতার মূল কারণ কী? আর কিছুই না, মানুষের নিষ্ঠুরতা। উত্তরাখণ্ডের দুর্গম চড়াই ধরে টানা হেঁটে যাওয়ার সাধ্য থাকে না অনেকেরই। আর হাঁটলেও। মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার সাধ্য তো থাকেই না। সেখানেই ভরসা এই প্রাণীগুলি। ওই চড়াই উতরাই ধরে বারবার যাতায়াত করতে হয় তাদের, প্রচণ্ড ভার পিঠে নিয়েই। কখনও পায়ে ক্ষত হয়ে যায়, কখনও রক্তাক্ত হয় পিঠ। কিন্তু উত্তরাখণ্ড হাই কোর্ট বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল যাই বলুক না কেন, প্রয়োজনীয় দেখাশোনাটুকুও মেলে না এদের। অ্যানিম্যাল রাইটসের কর্মীরা বারেবারে সরব হওয়া সত্ত্বেও, এ পথে না আছে আহত পশুর জন্য পর্যাপ্ত শেল্টার, না আছে কড়া নিয়ম বা ভিড় সংরক্ষণের সদিচ্ছা। এমনকি গোটা যাত্রাপথে একটি পশু হাসপাতাল পর্যন্ত জোটেনি। প্রায় আট-দশহাজার পশুর ভরসা একটিমাত্র মেডিক্যাল শেল্টার।
আরও শুনুন:
যত দোষ আমিষে! অথচ মাছ-মাংস নয়, ভোটের হাওয়া ঘোরাল ডাল-সবজিও
সরকারি হিসেব বলছে, ২০২২ সালে কেদারনাথে মারা গিয়েছিল ২০০টি খচ্চর। ২০২৩ সালে মারা যায় ১১৫টি প্রাণী। তারপরেও না সরকার, না পশুগুলির মালিকেরা, না তীর্থযাত্রীরা, কারোরই এ নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। রুদ্রপ্রয়াগের মুখ্য পশুচিকিৎসা অধিকর্তার ক্ষোভ, মানুষ পুণ্য অর্জনের জন্য জেনেশুনেই এই পথে আসে। অথচ পশুর পিঠে চেপে যাওয়ার আরামটুকুও ছাড়তে চায় না। পুণ্যে পৌঁছনোর এই পথ কি সত্যিই খুব ন্যায় নীতি মেনে চলে? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তবে সে প্রশ্নের উত্তর দেবে কে!